আজাদ আবুল কাশেম: শক্তিমান অভিনেতা সৈয়দ আহসান আলী সিডনী’র ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনয়শিল্পী’র স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
সৈয়দ আহসান আলী সিডনী ১৯৩৮ সালের ৩ অক্টোবর, ঢাকার বাবুবাজার এলাকায়, এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোটবেলা থেকেই গান-বাজনা ও নাটকের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। হাই স্কুলে পড়াকালীন সময়েই ১৯৫৩ সালে, প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। স্কুল পেরিয়ে নটরডেম কলেজ, তাঁরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও নাটক করে বেড়িয়েছেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে এম.এ পাস করেন তিনি।
সৈয়দ আহসান আলী সিডনী পড়ালেখা শেষে প্রথমে চাকরী করেন চিটাগাং রামগড় চা বাগানে। পরবর্তিতে লন্ডনে, পাকিস্তান হাইকমিশনে চাকরী পান। একসময় প্রাণের টানে দেশে ফিরে আসেন।
উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৬৮ সালে সৈয়দ আহসান আলী সিডনী চলচ্চিত্রে আসেন। প্রথম ছবিতেই খ্যাতিমান নায়িকা কবরীর বিপরীতে সাবলীল অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এরপর তিনি আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেন সেগুলো হলো- সূর্য উঠার আগে, পায়ের চলার পথ, সূর্যকন্যা, রূপালী সৈকতে, স্বামী, মায়ামৃগ, আয়না, সঙ্গিনী, মেঘ বিজলী বাদল, ফুলশয্যা প্রভৃতি ।
চলচ্চিত্রে তিনি সম্ভাবনাময় একজন নায়ক হওয়া সত্বেও, তাঁর তেমন সফলতা আসেনি। তারপরেও তিনি তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, তাঁর অভিনীত প্রতিটা ছবিতে।
একসময় সৈয়দ আহসান আলী সিডনী, ঝুঁকে পরেন টেলিভিশন নাটকের দিকে। যদিও তিনি আমাদের টেলিভিশন স্টেশন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে অভিনয় করে আসছেন এবং চলচ্চিত্রে আসার আগেই টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে বিখ্যাত হয়েছেন। টিভিনাটক তাঁকে দিয়েছে সফলতা-জনপ্রিয়তা। একের পর এক তিনি বিভিন্ন নাটকে, নায়ক থেকে শুরু করে নানা ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে করে নিয়েছেন ভালোবাসার আসন। হয়েছেন প্রসংশিত, পেয়েছেন যথাযথ সম্মান।
পরবর্তিতে তাঁর ছেলে জিতু আহসানও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন এবং একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
সৈয়দ আহসান আলী সিডনী অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বাড়ি ভাড়া, মানচিত্র, অপেক্ষার রেলগাড়ি, পার্ল, চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে, ভালোবাসি ঘাস, গাইড, উত্তরাধিকার, একদা এক দুঃস্বপ্নে, নয়ন সমুখে তুমি নাই, ইতি আমার বোন, অভিযোগ, শেষের কবিতা, তবুও গোলাপের গন্ধ, নিশীথ তৃষ্ণায়, একটি সেতুর গল্প, সাতজন যাত্রী, শেষ মানুষের ঠিকানা, চাঁদের ঘরে বাসবাস, সাত আসমানের সিঁড়ি, হাজার বছর পরে, আমি তুমি সে, শুকতারা, জোনাকি জ্বলে, ইত্যাদি।
আমাদের চলচ্চিত্র ও নাটকের শক্তিমান অভিনেতা সৈয়দ আহসান আলী সিডনী, অনন্তলোকে ভালো থাকুন- এই প্রার্থণা করি।