এ কে আজাদ: মেহফুজ। অভিনেতা। একজন শক্তিমান অভিনেতা। দেখতে বেশ সুদর্শন ছিলেন তিনি, শুরুর দিকে কয়েকটি ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেনও। পরবর্তিতে জাঁদরেল ভিলেন হিসেবে আবির্ভুত হন বাংলা চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দায়। ভরাটকন্ঠের প্রতিভাবান এই অভিনেতা সেই সময়ে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
একসময় তিনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করেন। জমিদার কিম্বা দরদী পিতা, বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে একজন সফলত অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। শক্তিমান অভিনেতা মেহফুজ-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০০৫ সালের ২ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
অভিনেতা মেহফুজ (কাজী মাহফুজুল হক) ১৯২৯ সালের ১৫ মে, ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খান বাহাদুর আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ খবিরুল হক ছিলেন ফরিদপুরের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের স্বন্দীপ উপজেলায়। মেহফুজ স্কুল ও কলেজে পড়ালেখা করেন ফরিদপুরে এবং কুমিল্লায়। তিনি কিছু দিন মাদ্রাসায়ও পড়াশুনা করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই নাটক আর অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল মেহফুজ-এর । একসময় তিনি দক্ষিণ সন্দ্বীপে একটি নাট্যদল গঠন করেন এবং সমগ্র সন্দ্বীপব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় নাটক করে বেড়াতেন। সেসময়ে তাঁর করা উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে ছিল- নবাব সিরাজউদ্দৌলা, টিপু সুলতান, দিলাল রাজা ইত্যাদি। তিনি নাটক করে অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন তখন।
মেহফুজ ১৯৫৩ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। এক সময়ে তিনি বেতারে নাট্যশিল্পী হিসেবে যোগ দেন।
সালাহউদ্দীন পরিচালিত ‘যে নদী মরু পথে’ (১৯৬১) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে মেহফুজ-এর চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে। তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে- তালাশ, জোঁয়ার এলো, মিলন, দরশন, আখেরী স্টেশন, আপন দুলাল, চাওয়া পাওয়া, আলীবাবা, পুনম কি রাত, রাজা সন্যাসী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মোমের আলো, অন্তরঙ্গ, জাল থেকে জ্বালা, অনির্বাণ, অংগার, মিলন, চাওয়া-পাওয়া, দি রেইন, বেদ্বীন, বধু বিদায়, ভাই বোন, মনের মানুষ, মধুমিতা, কাপুরুষ, দাবী, সোনার চেয়ে দামী, মাটির মায়া, নাচের পুতুল, সোনালী আকাশ, দাবী, ওরা ১১ জন, ছন্দ হারিয়ে গেলো, দয়াল মুর্শিদ, শাপমুক্তি, প্রতিশোধ, মনের মানুষ, মধুমিলন, রূপালী সৈকতে, কি যে করি, বদলা, মণিহার, আলিফ লায়লা, অংগার, মধুমিতা, মাটির ঘর, চন্দ্রলেখা, মধুমালতী, দূর থেকে কাছে, সওদাগর, চম্পাচামেলী, রাজদন্ড, স্বামীর ঘর, দুই বোন, ছোট বউ, ইত্যাদি।
মেহফুজ ব্যক্তিজীবনে মুনীরা বেগমের সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পাঁচ সন্তান। তিন মেয়ে দুই ছেলে। বড় মেয়ে চান্দা। মেজো মেয়ে তারা আর ছোট মেয়ে চুমকি। ছেলেরা হলেন, আরমান ও নোমান।
শক্তিমান অভিনেতা মেহফুজ দেখতে বেশ সুদর্শন ছিলেন। শুরুর দিকে কয়েকটি ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। এরপর তিনি জাঁদরেল ভিলেন হিসেবে আবির্ভুত হন বাংলা চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দায়। তিনি ছিলেন ভরাটকন্ঠের প্রতিভাবান একজন জনপ্রিয় খলঅভিনেতা। মন্দলোক হিসাবে তাঁর বাস্তবানুগ অভিনয় সেই সময় সিনেমাদর্শকদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছিল।
একসময় তিনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করেন। জমিদার কিম্বা দরদী পিতা বিভিন্নসব চরিত্রেই তিনি মানিয়ে যেতেন এবং এসব চরিত্রে অভিনয় করে সফলতাও পেয়েছেন। পেয়েছেন জনপ্রিয়তাও।
মেহফুজ অসংখ্য বেতার ও টেলিভিশনের জনপ্রিয়সব নাটকে অভিনয় করেছেন। আশির দশকে বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ুন আহমেদ রচিত, জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক- ‘এই সব দিন রাত্রি’তে, দাদু চরিত্রে বাস্তবসম্মত ও সাবলিল-সুন্দর অভিনয় করে আজও দর্শকদের হৃদয়ে, অমলিন হয়ে আছেন।
মঞ্চ-বেতার-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয়কর্মের মাধ্যমে, একজন ভালো রুচিসম্পন্ন অভিনেতা হিসেবে মেহফুজ- চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন।