হাসপাতালে টানা তিনি দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ভারতীয় তরুণ নির্মাতা পীযূষ পাল। তবে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিলে হয়তো বেঁচে যেত সে, এমনটাই দাবি তার বন্ধু এবং পরিবারের। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে রাস্তায় পড়েছিলেন এই তরুণ নির্মাতা।
কিন্তু তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পরিবর্তে পীযূষের দুর্ঘটনার মুহূর্ত ভিডিও ধারণেই ব্যস্ত ছিলেন পথচারীরা। সময়মতো নির্মাতাকে হাসপাতালে নিলে বাঁচানো যেত।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) ভারতের দিল্লির আউটার রিং রোডে মোটরসাইকেল দিয়ে অতিক্রম করছিলেন পীযূষ। এ সময় আরেক মোটরবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটে। মাথা ও মুখমণ্ডলে মারাত্মক আঘাত পেয়ে সংজ্ঞা হারান তিনি। এ অবস্থায় তার ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ ও মুঠোফোন চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ভারতে।
আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও পথচারীদের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে রাস্তায় পড়েছিলেন পীযূষ। রীতিমতো তার রক্তে ভেসে যায় রাস্তা। পঙ্কজ জেইন নামের এক পথচারী এসে শোনেন, আধা ঘণ্টার মতো পড়ে আছেন তিনি। আশপাশে অনেকেই ভিডিও করছিলেন। কিন্তু তাকে কোনো সহায়তা করছেন না কেউ।
দু-তিনজনকে নিয়ে ধরাধরি করে একটি অটোরিকশায় পীযূষকে স্থানীয় ক্লিনিকে নেন তারা। সেখানে কোনো চিকিৎসা না পাওয়ায় জ্যাম ঠেলে চার কিলোমিটার দূরে পিএসআরআই মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত শনিবার থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল পীযূষকে। সেখানেই তিন দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পীযূষের পরিবার ও বন্ধুরা বলেন, আরও আগে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি হয়তো বাঁচতেন।
পীযূষের বন্ধু স্বর্ণেন্দু বসু বলেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে রাস্তায় পড়ে থাকলেও তাকে কেউ হাসপাতালে নেননি। যারা শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন, তারা বলেছেন, পথচারীরা ভিডিও ধারণ করেছে, সেলফি তুলেছে। তবু উদ্ধার করেনি। পীযূষের মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। বিপদের মুহূর্তে তার মা-বাবা ফোনে কল করলে তা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখে।
বুধবার (১ নভেম্বর) ময়নাতদন্ত শেষে পীযূষের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বিকেলেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।