জাপানের প্রভাবশালী এক সাংবাদিক নোরিয়ুকি ইয়ামাগুচি। পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক। প্রভাবশালী এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন এক শিক্ষানবিশ সাংবাদিক।
একসময় জাপানজুড়ে ঝড় তোলে এই ঘটনা। ২০১৫ সালের সেই ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘ব্ল্যাক বক্স ডায়েরিজ’। বানিয়েছেন শিওরি ইতো নামের সেই শিক্ষানবিশ সাংবাদিক।
যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে মামলা করতে গিয়েই প্রথম বাধার মুখে পড়েন শিওরি ইতো। বিচার চেয়ে দীর্ঘ সময় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। কখনো শুনতে হয়েছে, মামলা নেওয়া যাবে না বা প্রক্রিয়াটা কঠিন, তদন্ত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে- এমন নানা কথা।
অন্যদিকে কোনো প্রমাণ না থাকার কথা বলে আইনি প্রক্রিয়া থেকে ঘটনাটিকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একটি পক্ষ। তখন নিজেই ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রমাণ সংগ্রহ করতে থাকেন ইতো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হন ইতো। জাপানের জনগণও একসময় ‘মি টু’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে তরুণীটির পক্ষে দাঁড়ান। শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়া। কিন্তু সেটাও ছিল লোকদেখানো। মামলা নিয়ে অনেকেই কথা বলতে চাননি। এই সময়ে কোর্টে কিংবা গণমাধ্যমে যে যা বলেছেন, যত ফোন তার কাছে এসেছে, যাদের কাছে তিনি গিয়েছেন- সবই রেকর্ড করে রেখেছিলেন ইতো বা তার বন্ধুরা।
কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে। ভিডিও করতে গিয়ে ‘ভবিষ্যতে বিপদে পড়বে’, এমন হুমকিও শুনতে হয়েছে। সেগুলোও মেয়েটির ক্যামেরায় ধারণ করা ছিল। এসব ভিডিও জোড়া দিয়ে ইতো নিজেই বানিয়ে ফেলেন এই তথ্যচিত্র ‘ব্ল্যাক বক্স ডায়েরিজ’।
তথ্যচিত্রটিতে ইতোর ব্যক্তিগত জীবনের নানা মুহূর্তও উঠে এসেছে। ইতো বাসায় নাচছেন, গাইছেন, মজা করছেন। এসব দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে, ধর্ষণের মতো একটা ঘটনার শিকার মানুষের জীবনে এসব কি মানায়? কিন্তু জীবন যে তার নিয়মেই চলে, সেটা বুঝিয়েছেন ইতো নামের এই সাহসী সাংবাদিক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেত্রী।
১ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের তথ্যচিত্রটি দেশ-বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়েছে, আইডিএফএ, সানড্যান্স, হংকংসহ একাধিক উৎসবে মনোনয়ন ও পুরস্কার পেয়েছে।