বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা প্রবীর মিত্রের শোকস্তব্ধ দেশের শোবিজ অঙ্গনসহ তার ভক্ত-অনুরাগীরা। গতকাল রবিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর অভিনেতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানাজা ও দাফন নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
দাফন নিয়ে অভিনেতার ছেলে মিঠুন মিত্র গতকাল রাতে জানান, রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হবে। সোমবার বাদ যোহর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে চ্যানেল আইতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
নামের কারণে প্রবীর মিত্র হিন্দু না মুসলাম- এ নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে অনেকের মনে। সে বিষয়ে খোলাসা করেছেন মিশা সওদাগর। তিনি জানিয়েছেন, প্রবীর মিত্র ভাই মুসলামনই ছিলেন। ধর্ম মতে তার জানাজা হবে এবং দাফন হবে।
এদিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর প্রবীর মিত্রের নাম পরিবর্তন করা রাখা হয়েছিল হাসান ইমাম। কিন্তু সে নামে পরিচিতি পাননি তিনি। আমৃত্যু প্রবীর মিত্র হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত এই অভিনেতা। প্রবীর মিত্রর পারিবারের সদস্যরাই জানিয়েছেন এ তথ্য।
এক সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সে সময়ের ভিডিওতে প্রবীর মিত্রকে বলতে শোনা যায়, আমি তো কনভার্ট হয়েই ওর মাকে (স্ত্রী) বিয়ে করেছিলাম। তখন মুসলমান হয়েছিলাম। তখন প্রয়োজন হয়েছিল মুসলমান হওয়া, এখনও সে ধর্মেই আছি।
ধর্ম নিয়ে প্রবীর মিত্রের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। মানুষ সবার উপরে।
সেই সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র জানিয়েছেন, অভিনয় করতে না পারলে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি অভিনয় করতে পারছি না, এটাই আমার বড় কষ্ট। অভিনয়টা আমাকে খুব টানে। অপেক্ষায় আছি, সুস্থ হয়ে আবার অভিনয়ে ফেরার।
ভিডিওতে সহকর্মীদের কথাও বলেছিলেন এই অভিনেতা। তিনি জানিয়েছেন, অনেকেই তার খোঁজখবর নেন। সবাই তার জন্য দোয়া করেন। তিনিও সবার জন্য দোয়া করেন, সবাই যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন।
জানা গেছে, বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শরীরে অক্সিজেন-স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ প্রবীর মিত্রের। ১৯৮২ সালে তিনি বড় ভাল লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।
প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজান্তা মিত্র মারা যান ২০০০ সালে। তার তিন ছেলে মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম। এক মেয়ে ফেরদৌস পারভীন। এদের মাঝে সামিউল মারা গেছেন। প্রবীর মিত্রের জন্ম ১৯৪১ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় নাম লেখান। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়।