উপস্থাপক, পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক, লেখক হানিফ সংকেত আর নেই। মঙ্গলবার (২৪ মে) রাত থেকেই সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। টিকটক, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে এ ভুয়া তথ্যের খবরটি ছড়ানো হয়।
গুণী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের মৃত্যুর গুজবে তার লাখো ভক্ত এবং অনুরাগীরা শংকিত, ব্যথিত এবং চিন্তাগ্রস্ত।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ সংকেত বলেন, ‘এসব নিয়ে বলার আসলে কোনো ভাষা নেই। আমি শুনেছি টিকটক নামের একটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রথমে গুজবটি ছড়ায়। তারপর সেটিকে সত্য মনে করে কোনো খোঁজ খবর ছাড়াই দায়িত্বশীল অনেকে আমার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন। সেখান থেকেই বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে।
সবাই উৎকন্ঠা নিয়ে আমার সঙ্গে, আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্লিজ, এগুলো করবেন না। এসব ঘটনা একজন মানুষ ও তার পরিবারকে দারুণভাবে আহত করে, বিব্রত করে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি আমার সঙ্গে।’
হানিফ সংকেত জানান, এরইমধ্যে তিনি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানিয়েছেন। বেশ কিছু ইউনিট কাজ করছে গুজব প্রচারকারীদের ধরার জন্য।
তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। যারা গুজবটি ছড়িয়েছেন তাদের শনাক্ত করে যেন শাস্তি দেয়া হয়। দুদিন পরপর দেশের নানা অঙ্গনের মানুষকে নিয়ে এসব মিথ্যে খবর ছড়ানো হয়। এটা খুবই দুঃখজনক।’
এদিকে কিছু পেজ থেকে আবার দাবি করা হচ্ছে, হানিফ সংকেত নন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার এক ভাই। হানিফ সংকেত এই তথ্যটিও ভুল বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি জানান, তার ভাই বছর খানেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন হানিফ সংকেত। প্রয়াত ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দিয়ে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এরপর তিনি দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ নিয়ে হাজির হন। এখনো তিনি স্যাটেলাইট চ্যানেলের রাজত্বেও ‘ইত্যাদি’ নিয়ে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে রাজত্ব করে চলেছেন। তার পরিচালিত ও উপস্থাপিত অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তিনি সামাজিক অসঙ্গতি, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম তুলে ধরেন।
কিছুটা রম্যভাবে তিনি সমসাময়িক নিন্দিত ঘটনার বর্ণনা ও তার বিরোধিতা করে সামাজিক করণীয় তুলে ধরেন তিনি। হানিফ সংকেত নিজের কাজের ব্যাপারে খুব সচেতন একজন মানুষ।
নাটক পরিচালনাতেও হানিফ সংকেত দেখিয়েছেন নির্মাণের মুন্সিয়ানা। তার পরিচালিত জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে ‘আয় ফিরে তোর প্রাণের বারান্দায়’, ‘দুর্ঘটনা’, ‘তোষামোদে খোশ আমোদে’, ‘কিংকর্তব্য’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘শেষে এসে অবশেষে’ উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন হানিফ সংকেত। বেশ কয়েকটি ব্যঙ্গ ও রম্য রচনা লিখেছেন তিনি।‘চৌচাপটে’, ‘এপিঠ ওপিঠ’, ‘ধন্যবাদ’, ‘অকাণ্ড কাণ্ড’, ‘খবরে প্রকাশ’, ‘ফুলের মতো পবিত্র… ’, ‘প্রতি ও ইতি’, ‘আটখানার পাটখানা’ অন্যতম।
এছাড়া তার লিখিত রম্য সাহিত্য পাঠক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়।