যে ছবিতে প্রথমবার ক্যামেরার পেছন থেকে সামনে এলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সেটাকে কিঞ্চিৎ বিশেষ বলাই যায়। তবে দিনশেষে সিনেমার ভালো-মন্দ নির্ভর করে গল্প ও অভিনয়ের ওপর। সেটাতেও যে তিনি উতরে গেছেন, তার আভাস মিলছে ক্রমশ।
বলা হচ্ছে ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার কথা। ফারুকী নির্মিত যে ছবিতে তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন, সঙ্গে স্ত্রী; অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। গত ৮ অক্টোবর এটি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়, পুরস্কার না পেলেও প্রশংসা পায়।
সেই ধারাবাহিকতা অটুট থাকলো চলমান মুম্বাই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এতে ‘আইকনস: সাউথ এশিয়া’ বিভাগে অংশ নিয়েছে ফারুকীর ছবিটি। ইতোমধ্যে দুটি প্রদর্শনী হয়েছে। আর দুটিতেই হাউজফুল দর্শক ছিল বলে জানালেন ফারুকী। দর্শকের এমন উপস্থিতি আর শো শেষে তাদের আগ্রহী প্রশ্ন-পর্বে আপ্লুত হয়েছেন তিনি, ভিজেছে চোখের কোণ।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ফারুকী বললেন, ‘ভালোবাসা কি বাঁধাইয়া রাখা যায়? তাহলে মুম্বাইতে এই দুই দিন আমরা যা পেয়েছি তা বাঁধাইয়া নিয়া আসতাম। আজকে ছিলো আমাদের সেকেন্ড শো! আজকেও ফুল হাউজ! ফুল হাউজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিলো ফুল হার্ট ভালোবাসা। কতবার যে আমার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে মুম্বাই! লাভ ইউ, মুম্বাই।’
এই ছবির ক্ষেত্রে একটি বিরল ঘটনাও ঘটিয়েছেন নির্মাতা ফারুকী। ছবির নির্মাণ শেষে একটি উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে, ট্রেলারও এসেছে অন্তর্জালে। কিন্তু হঠাৎ তার মাথায় একটি দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। সিদ্ধান্ত নেন, দৃশ্যটি ছবিতে যুক্ত করবেন। তাই বুসান থেকে ফিরে গত ২৬ অক্টোবর সেই দৃশ্যের শুটিং করা হয়।
ওই ঘটনা নিয়ে নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেছেন, ‘আমি একটা পাগল মানুষের সংসার করি। পাগল ডিরেক্টরের কাজ করেছি, সেটার শাস্তি ভোগ করছি। আমাদের সিনেমার শুটিং শেষ হয়ে গেছে, ডাবিং হয়ে গেছে, রিলিজ হয়ে গেছে, বুসানেও চলে গেছে। এখন হঠাৎ করে ফারুকীর স্বপ্নে একটা সিন এসেছে, সেটার শুটিং করছে। কপাল!’
এই ব্যতিক্রম ঘটনার রেশ টেনে মুম্বাই উৎসবের একটি মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ফারুকী। সেটা এরকম, ‘একটা ইন্টারেস্টিং এক্সপেরিমেন্ট হয়ে গেলো আজকে (৩০ অক্টোবর)। মুম্বাই ফেস্টিভ্যালের ডায়নামিক ডিরেক্টর দীপ্তির কল্যাণে পাঁচ দিন আগে যে দৃশ্য আমি শুট করেছি, সেটা সহ মুম্বাইয়ের প্রথম শো-টা (২৮ অক্টোবর) হয়েছে। এবং আমার ও দর্শকদের মন ভরে গেছে। আমি ভাবছি আজকেও একই ভার্সন দেখাবে! কিন্তু ওরা ভুল করে আগের ভার্সন দেখিয়ে দিয়েছে। আমি সেটা জানতাম না। কিন্তু দর্শকের প্রতিক্রিয়া একই রকম। একই ভালোবাসা! একই আবেগ! আমরা দুর্বল মানুষ! এই ভালোবাসার জোরেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে চাই, অসাধ্য সাধন করতে চাই।’
তবে ভিনদেশের উৎসবে বা পর্দায় ছবি দেখিয়ে প্রশংসা পেলেও নিজ দেশের দর্শকের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ফারুকীর আত্মা। তাই দিনশেষে এখানকার পর্দায় ছবিটি দেখাতে চান। সেই অপেক্ষার কথাও জানিয়েছেন ‘টেলিভিশন’ খ্যাত নির্মাতা।
উল্লেখ্য, ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ ছবিতে ফারুকী-তিশার সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের, শরাফ আহমেদ জীবন, ডলি জহুর প্রমুখ। এটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রজেক্টের একটি সিনেমা।