English

30 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৮, ২০২৫
- Advertisement -

মুকুটহীন সম্রাট খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: মুকুটহীন সম্রাট খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। প্রয়াত এই খ্যাতিমান অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

আনোয়ার হোসেন ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর, জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ কে এম নজির হোসেন, ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার এবং মাতা সাঈদা খাতুন।

তিনি জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে আই এ পাস করেন। কলেজ পরীক্ষার পরই তাঁর পিতার বন্ধু আবদুল্লাহ খানের- সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে সুপারভাইজার হিসেবে চাকুরী শুরু করেন।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর অভিনয়ের প্রতি আসক্তি ছিল। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় নাটকে অভিনয় করতেন।
কলেজের প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায়ই আনোয়ার হোসেন অভিনয় করেন, আসকার ইবনে শাইখের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে। আর এভাবেই তাঁর অভিনয় জগতে আসা।

তখনকার রূপালী জগতের তারকা- ছবি বিশ্বাস, কাননদেবী এদের বিভিন্ন ছবি দেখতে দেখতেই রূপালী জগতে আসার ইচ্ছা জাগে আনোয়ার হোসেনের। রূপালী পর্দায় অভিনয় করার আশা নিয়ে তিনি ১৯৫৭ সালে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে নিয়মিত মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। পরে তিনি ঢাকা বেতারে অডিশন দেন এবং বেতারের নাটকেও অভিনয় করতে থাকেন ।

মঞ্চনাটকে কাজের সুবাদে আবদুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস ও হাবিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন আনোয়ার হোসেন । পরিচিত হন চিত্রপরিচালক মহিউদ্দিনের সঙ্গেও। তিনিই আনোয়ার হোসেনকে ‘তোমার আমার’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। এই ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৬১ সালে। আনোয়ার হোসেন অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ- সূর্যস্নান, জোঁয়ার এলো, কাঁচের দেয়াল, নাচঘর, জানাজানি, গূধলীর প্রেম, দুই দিগন্ত, বন্ধন, একালের রূপকথা, উজালা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, গোরি, শীত বিকেল, ভাইয়া, অভিশাপ, রাজা সন্যাসী, শহীদ তীতুমীর, গাজী কালু চম্পাবতী, পরশমনি, অবাঞ্চিত, যাহা বাজে শাহ নাই, নীল আকাশের নীচে, কোথায় যেন দেখেছি, জীবন থেকে নেয়া, বিনিময়, ক খ গ ঘ ঙ, দীপ নিভে নাই, গান গেয়ে পরিচয়, জয় বাংলা, পালঙ্ক, চরিত্রহীন, মানুষের মন, বাঘা বাঙ্গালী, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, নিজেরে হারায়ে খুঁজি, দয়াল মুর্শিদ, কুয়াশা, ঈশা খাঁ, রংবাজ, লাঠিয়াল, পাগলা রাজা, সূর্যসংগ্রাম, রূপালী সৈকতে, গোলাপী এখন ট্রেনে, মিন্টু আমার নাম, অলংকার, কার পাপে, রাজমহল, আরাধনা, সুন্দরী, নাগরদোলা, লুটেরা, মোকাবেলা, এতিম, ঘরণী, বাধঁন হারা, বিনিসুতার মালা, সুখের সংসার, সোহাগ মিলন, সওদাগর, সবুজ সাথী, দেবদাস, বড় ভালো লোক ছিল, লালু ভুলু, আবেহায়াত, সীমার, প্রতিহিংসা, আশা, চেনামুখ, তিন বাহাদুর, ছোট মা, চ্যালেঞ্জ, পদ্মাবতী, নরম গরম, রাজদন্ড, নাজমা, শরীফ বদমাশ, জালিম, হিম্মতওয়ালী, সকাল সন্ধ্যা, ভাত দে, সখিনার যুদ্ধ, পেনশন, নয়নের আলো, রাই বিনোদিনী, তালাচাবি, শিরি ফরহাদ, বাহাদু মেয়ে, মাটির কোলে, মা ও ছেলে, তুফান মেইল, হাসান তারেক, নির্দোষ, মর্যাদা, চন্দনা ডাকু, লালু মাস্তান, দায়ী কে?, স্বামী-স্ত্রী, সাহেব, ঘরের বউ, পিতা মাতা সন্তান, সত্য মিথ্যা, মিয়াভাই, সাজানো বাগান, সিপাহী, প্রেমের তাজমহল, ঘানি, ইত্যাদি।

আনোয়ার হোসেন চলচ্চিত্র ছাড়াও অভিনয় করেছেন টেলিভিশনেও। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি বিশেষ শিল্পীর মর্যাদায় প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছেন।

খ্যাতিমান অভিনেতা আনোয়ার হোসেন, চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় কর্মের জন্য পেয়েছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া পুরস্কার ও সম্মাননা। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো- ১৯৬৭ সালে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে ‘নিগার পুরস্কার’, ১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ও ১৯৮৭ সালে ‘দায়ী কে’ ছবির জন্য পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। ১৯৮৮ সালে অর্জন করেন ‘একুশে পদক’। এছাড়াও একাধিকবার বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।

ব্যক্তিজীবনে আনোয়ার হোসেন ১৯৫৭ সালে, নাসিমা খানম’কে বিয়ে করেন। তাদের পাঁচ সন্তান। চার ছেলে এক মেয়ে।

অভিনয়ে অসামান্য প্রতিভার অধিকারী-জননন্দিত সৃজনশীল অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনি ভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী যে কোন ছবিতে, যে কোন চরিত্রে তিনি ছিলেন মানানসই-সুযোগ্য অভিনেতা।

রোমান্টিক প্রেমিক নায়ক থেকে শুরু করে, লাঠিয়াল, ডাকাত, মেথর, দারোয়ান, দপ্তরী, চাকর, বড় ভাই, শিক্ষক, প্রফেসর, জজ সাহেব, কৃষক, মাঝি, অন্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, ল্যাংড়া, রাজা-বাদশা, ড্রাইভার, ডাক্তার, ভবঘুঁরে, গায়ক, সন্যাসী, ডাকপিওন, বাবা, দাদা’সহ নানা ধরণের বৈচিত্র্যময় চরিত্রে, তিনি বাস্তবধর্মী অভিনয় করে গেছেন।
চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আনোয়ার হোসেনের।

ঐতিহাসিক ও রাজা-বাদশাহদের চরিত্রে তিনিই সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। ঐতিহাসিক চরিত্রে দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে অভিনয় করে গেছেন। এসব ছবিতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।
এরমধ্যে- ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’য় অভিনয় করে, ‘চলচ্চিত্রের নবাব’ হিসেবে আখ্যায়ীত হয়েছেন। হয়ে আছেন কিংবদন্তী। সাধারণ সিনেমাদর্শকদের কাছে, আনোয়ার হোসেন ছিলেন- বাংলা, বিহার, উড়িস্যার শেষ নবাব- সিরাজউদ্দৌলা। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় মানুষের মনে দারুনভাবে প্রভাব ফেলেছিলেন। সেই সময়ে তিনি, যখন যেখানে গিয়েছেন- সেখানেই তাঁকে এক নজর দেখার জন্য জনতার ঢল নামতো। এতোটাই জনপ্রিয় ও সম্মানিত ছিলেন আনোয়ার হোসেন।
তিনিই একমাত্র অভিনেতা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে, যিনি নিজেই নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন- ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছবিতে, অভিনেতা আনোয়ার হোসেন- চরিত্রে।
বর্তমান প্রজন্ম হয়তো ধারণাই করতে পারবে না যে, কত উচুমাপের অভিনেতা ছিলেন, কত জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন আনোয়ার হোসেন।
Azad
Azad Abul Kashem
অসংখ্য ব্যবসাসফল, হিট-সুপারহিট, জনপ্রিয়-কালজয়ী ছবির অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। একসময় পারিবারিক-সামাজিক ছবির একচ্ছত্র প্রতাপশালী অভিনেতা ছিলেন তিনি। চরিত্রাভিনেতা হয়েও তাঁর চাহিদা ছিল নায়কদের চেয়েও বেশী। তখন তাঁর সাথে জুটি হিসেবে ছিলেন, আরেক প্রখ্যাত অভিনেত্রী রোজী। তাঁরা দুজন ছবিতে থাকা মানে, সেই ছবি দর্শক চাহিদায় এক নাম্বারে, ছবি হিট-সুপারহিট হওয়ার সমূহ-সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা অভিনেতা বলা যেতে পারে তাঁকে। একজন আনোয়ার হোসেন যুগে যুগেও জন্ম নেয় না, কোনো দেশে। এমন একজন আনোয়ার হোসেন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পে আর জন্মাবে কি না, সন্দেহ আছে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন