একজন জহুরির চোখ ঠিকই খুঁজে পেয়েছিল ইদ্রিস আলী নামের সুর্দশন-স্মার্ট-শিক্ষিত এক তরুণকে। মাত্র ২১ বছরের সেই তরুণকে সুভাষ দত্তের মতো মহারথীর চিনতে একটুকুও ভুল হয়নি। সেক্ষেত্রে তার ভাগ্যও সহায় বলতে হবে, অভিনয়ের প্রথমেই সুভাষ দত্তের মতো একজন চলচ্চিত্রের কাণ্ডারির সান্নিধ্য পাওয়া ভাগ্যই বৈকি!
সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ১৯৭৭ সালের ২৬ মার্চ ‘বসুন্ধরা’ ছবির মধ্য দিয়ে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান টগবগে সেই তরুণ, সেই শুরু… এরপর কেটে গেছে প্রায় চার দশক, করেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয়, পেয়েছেন দর্শকদের অফুরন্ত ভালোবাসা। ছড়িয়েছেন প্রাণবন্ত অভিনয়ের বর্ণচ্ছটা, রোমান্টিক, সামাজিক, অ্যাকশন, এমনকি কমেডি চরিত্রেও তার অভিনয়ের কোন জুড়ি ছিল না। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পারিবারিক টানাপোড়েনে বিদ্ধ সংগ্রামী পুরুষ চরিত্রে তার পর্দা কাঁপানো অভিনয় ছিল অভিভূত করার মতো— তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার চির সবুজ নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। বাবা হাজী আব্দুল আলী ও মা সরুফা খাতুন। ১৯৭৫ সালে রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল, সেই হিসেবে কিছু নাট্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। করেছেন মঞ্চে অভিনয়, সেখানে থেকেই ১৯৭৭ সালে গুণী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সুভাষ দত্ত তার ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন।
প্রথম ছবিতেই কাঞ্চন বিপরীতে পান ববিতার মতো তারকা অভিনেত্রীকে। ‘বসুন্ধরা’ (৩০/১১/১৯৭৭)-এর পর প্রায় তিন শতাধিকের উপর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ক্যারিয়ার সাফল্যের ইতিহাস, যে ইতিহাসের চাক্ষুষ প্রমাণ ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র এখনো দেশীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র হিসেবে দলিল হয়ে আছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন ‘বসুন্ধরা’ দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অভিনয়কে জয় করতেই এসেছেন। যার পরের ধাপটি আরো বিকশিত হয় ‘সুন্দরী’(২১/১২/১৯৭৯) দিয়ে, গ্রামের এক সাধারণ ছেলের চরিত্রে অভিনয়ে সবার নজরে পড়েন তিনি। এরপর ‘আঁখি মিলন’ (২৮/১০/১৯৮৩) ছবিতে উচ্ছল অভিনয়ে সরাসরি দর্শকদের মনের ঘরে পৌছে যান, একক নায়ক হয়ে তার এটিই প্রথম সুপার ডূপার হিট ছবি। অবশ্য এর মধ্যে ‘শেষ উত্তর’, ‘ভালো মানুষ’, ‘সাক্ষী’, ‘কলমীলতা’, ‘রাজা সাহেব’, ‘রেশমী চুড়ি’, ‘বড় বাড়ীর মেয়ে’, ‘নালিশ’, ‘চাঁদ সূরুজ’, ‘কাজল লতা’, ‘সিকান্দার’-এর মতো ছবিগুলো করা হয়ে গেছে। যার বেশির ভাগই ছিল সফল, তবে মাল্টিস্টার ছবি। আর একক নায়ক হয়ে প্রথম সফল ছবিটিই ছিল ‘আঁখি মিলন’, বিপরীতে ছিলেন সুচরিতা। ছবির সবকটি গানও হয়েছিল তূমুল জনপ্রিয়, যার মধ্যে অন্যতম আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, তুই কেমন পুরুষরে আমার মনের কথাগুলো পড়তে পারিস না ও কথা বলবো না বলেছি শুনবো না শুনেছি— এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
চলবে…