মাহবুবুর রহমান মুন্না: নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ছড়াতেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। নিসচার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়েছে শাজাহান খান ও তার দোসরা। পরে একপর্যায়ে শাজাহান খানের নামে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
এত প্রভাবশালী শ্রমিক নেতার নামে মামলা দেওয়ার সাহস কেবলমাত্র ইলিয়াস কাঞ্চন দেখিয়েছিলেন। যার কারণে তাকে জামায়াত বিএনপি বলে ট্যাগ দেওয়া হয়েছিল। যদিও রাজনীতির লোক নন তিনি। মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শাহজাহান খানের নিয়ন্ত্রিত পরিবহন শ্রমিকরা।
নিরাপদ সড়ক ইস্যুতে শাজাহান খান ও ইলিয়াস কাঞ্চন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন। শাজাহান খানকে তার বক্তব্যের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরতে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী শাজাহান খান। শুধুমাত্র ইলিয়াস কাঞ্চন নয় তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে অসত্য, বানোয়াট ও উদ্ভট কিছু প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন শাজাহান খান। এতে ভীষণ রক্ত ক্ষরণ হয়েছিল ইলিয়াস কাঞ্চনের ভক্ত ও নিসচার নেতাকর্মীদের মাঝে।
জানা যায়, প্রবল ক্ষমতার দাপটে অঢেল সম্পদও কামিয়েছেন প্রভাবশালী নেতা শাজাহান খান। শাজাহানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সার্বিক কনস্ট্রাকশন, সার্বিক শিপিং লাইন চট্টগ্রাম, সার্বিক ফুড ভিলেজ (সার্বিক হোটেল) সবকিছুই তার পরিবারের সদস্যদের নামে। বিশেষ করে ঢাকা-মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহন কোম্পানিতে একক আধিপত্য তার। এ পরিবহনের ব্যানারে ২০০টির বেশি গাড়ি চলাচল করত। এ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করেছিলেন তার ছেলেকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আটক করা হয়েছে ।
এই শাজাহান খানের নির্দেশে পুরো পরিবহন খাত চলত। তার ইশারায় পরিবহন বন্ধ বা চালু থাকত। পরিবহন শ্রমিকদের উন্নয়নে কোনো অবদানই ছিল না তার। প্রতিদিন সড়ক থেকে কোটি কোটি বেশি টাকা তুলত তার ফেডারেশন। কিন্তু সেসব টাকা শ্রমিকদের কোনো কাজেই আসত না বলে অভিযোগ রয়েছে। শাজাহান খান গ্রেফতার হলেও সারা দেশে কোন পরিবহন শ্রমিক সংগঠন প্রতিবাদ জানায় নি। বরং অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের মুখোশ উন্মোচন করতে গিয়ে এবার শাজাহান খানের মুখোশ উন্মোচন হচ্ছে।
বাংলা সিনেমার পুরো ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনার’নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে যখন ষড়যন্ত্র করেছিলেন শাজাহান খান তখন সারা দেশে ফুঁসে উঠেছিল নিসচার কর্মীরা। তখন তাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। বরং কোন উৎসব কিংবা দূর্যোগে নিসচা সংগঠনের সহযোগীত দিতে বলতেন পরিবহন শ্রমিকদের।
দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) নামে একটি সংগঠন। সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) তার কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থনে ধন্য হয়ে ওঠে। নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিষ্ঠার এই ৩১ বছরের মধ্যে জনকল্যাণমুখী সংগঠন হিসাবে তার ব্যাপক কর্মতৎপরতায় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পেয়ে গেছে যথেষ্ট পরিচিতি। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এখন একটি সফল সামাজিক আন্দোলনের নাম। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। স্ত্রী বিয়োগের শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নিসচার কার্যক্রম বর্তমানে সর্বস্তরে প্রশংসিত হচ্ছে। আর ইলিয়াস কাঞ্চন চিত্রনায়ক থেকে সড়কের মহানায়কে পৌঁছেছেন।
-মাহবুবুর রহমান মুন্না
সাধারণ সম্পাদক: নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখা।