English

16 C
Dhaka
শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

মরহুমা জাহানারা কাঞ্চন: যাঁর মৃত্যুদিনে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’

- Advertisements -

এ কে আজাদ: আজ ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। যাঁর মৃত্যুদিনে এই ‘দিবস’টি জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী পালিত হয়, তিনি মরহুমা জাহানারা কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর, দুই সন্তান’সহ বান্দরবানে, স্বামী চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাবার পথে, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন জাহানারা কাঞ্চন (চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সে সময় ছবির শ্যুটিংয়ে বান্দরবান অবস্থান করছিলেন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৯ বছর। অকাল প্রয়াত জাহানারা কাঞ্চন-এর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিনী। মমতাময়ী মা। একজন চিত্রতারকার প্রিয়তমা স্ত্রী। সড়কে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে তিনি আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন যে, ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ নিছক নিয়তি নয়। এটা মানবসৃষ্ট একটি ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলনের জন্ম হয়েছে। পরবর্তীতে সাড়া দেশের মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। তাই সর্বোস্তরের জনগণের দাবীকে আমলে নিয়ে, বাংলাদেশ সরকার, জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যু দিন- ২২ অক্টোবর’কে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে কয়েক বছর আগেই।

জাহানারা কাঞ্চন ১৯৬৪ সালের ৩ মার্চ, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এক সম্ব্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা আবদুল হাফিজ ছিলেন ব্যবসায়ী ও এলাকার জনপ্রতিনিধি। মা নুরবানু গৃহিনী। ৫ ভাই- ৭ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। ১৯৮০ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এসএসসি পাসের আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ও সংসারের প্রতি মনযোগী হতে গিয়ে লেখাপড়াটা আর এগুতে পারেননি।

১৯৭৯ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জাহানারা কাঞ্চন। ভালবাসার পথ বেয়ে সংসারজীবন এগিয়ে যাচ্ছিল তাদের। ঘরে দুটি সন্তান- কন্যা ইশরাত জাহান ইমা ও ছেলে মিরাজুল মইন জয়। সুখ আর শান্তিতে ভরে ছিল তাদের ছোট্ট সংসার।

কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হতে দেয়নি আমাদের ‘সড়কব্যাধি’।

প্রিয়তমা স্ত্রী’র অকাল মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান ইলিয়াস কাঞ্চন দু’টি অবুঝ সন্তানকে বুকে নিয়ে, শোক’কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, এফডিসির লাইট-ক্যামেরা আর অ্যাকশনের চিরচেনা রঙিন ভূবন ছেড়ে, সড়ক’কে নিরাপদ করতে নেমে পড়েন রাজ পথে। শুরু করেন নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন।

নিজের স্ত্রী’র জীবন যে অপঘাতে, সড়কের অনিয়মে নিভে গেল, সেই সড়কের মড়ক থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে- পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়- এই শ্লোগান নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’। যা আজ দেশের সকল মানুষের প্রাণের দাবী, প্রাণের সংগঠন- ‘নিরাপদ সড়ক চাই’।

যাঁর অকাল মৃত্যুর মধ্যদিয়ে এদেশে সড়ক নিরাপদ করার সামাজিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। সর্বোস্তরের মানুষ নিরাপদ সড়কের দাবীতে একত্রিত হয়েছে। সেই মরহুমা জাহানারা কাঞ্চনের প্রতি তখনই প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে, যখন আমরা সবাই, সড়কে নিয়ম মেনে চলবো, সড়কে চলার সরকারি আইন যথাযথভাবে মানবো।

আজ ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ এবং মরহুমা জাহানারা কাঞ্চনের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই মৃত্যু দিবস-এ তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনন্তলোকে তিনি ভালো থাকুন, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপদ হোক- এই প্রার্থণা করি।

এ কে আজাদ
চলচ্চিত্রসংসদকর্মী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন