ভেজাচোখ। যে সিনেমার মর্মান্তিক গল্পে চোখ ভিজে নাই এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া যায় না। হঠাৎ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ‘জীবন’ নামের উচ্ছল এক প্রাণবন্ত যুবকের মৃত্যুর কাছে হেরে যাওয়ার হৃদয় বিদারক গল্পে কেঁদেছে পুরো হল ভর্তি দর্শক। বিশেষ করে ছবির শেষ দৃশ্যে আগ্রার তাজমহলের সামনে ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার দৃশ্যে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে মহিলা দর্শকদের।
সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য, যা না দেখলে কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়। সিনেমার গল্প অনুযায়ী একেবারে বাস্তবিক করে তুলতে ছবিটির শুটিং হয়েছিল মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, দিল্লি, মাশহৌর, কলকাতা ও আগ্রার তাজমহলের সামনে। আর ‘ভেজা চোখ’ই আমাদের একমাত্র চলচ্চিত্র, যা তাজমহলের একেবারে সামনে থেকে শুটিং করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই ভেজা চোখ সিনেমার সেই সুটিংস্পটে এলেন সিনেমার হিরো ইলিয়াস কাঞ্চন।
নিরাপদ সড়ক চাই এর একটি সেমিনারে অংশ নিতে ইলিয়াস কাঞ্চন গতকাল মুম্বাই পৌছান। সেখানে তিনি যে হোটেলে অবস্থান করছেন ঠিক সেই হোটেলের পাশেই ৩০ বছর আগে এই সিনেমার সুটিং করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সেই পুরনো দিনের স্মৃতি স্বরণ করে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন ভক্তদের জন্য। ভিডিও বার্তায় তিনি দর্শকদের জানান, তিনি এখন বোম্বে আছেন। বোম্বের তাজ হোটেলে আছেন তিনি। এসময় তিনি ভিডিওতে দেখান তাজের সামনে ইন্ডিয়া গেট যেখানে সুটিং করা হয়েছিলো ভেজা চোখ সিনেমার সুটিং। এসময় তিনি সিনেমাটি সম্পর্কে নানা কথা বলেন।
দেশে অনেক ভালো ভালো ছবি নির্মাণ হয়েছে, তবে ‘ভেজা চোখ’ যেন এখনো দর্শকদের মনে আলাদা একটি জায়গা তৈরি হয়ে আছে। একটি ছবি তখনই পরিপূর্ণতা পায় যখন তার সব দিকগুলো মানুষের মন ছুঁয়ে যায়, যা ‘ভেজা চোখ’-এর মধ্যে ছিল বিদ্যমান।
ছবিটির প্রযোজক ছিলেন জনাব ইকবাল সাহেব, এটি তার প্রথম প্রযোজিত ছবি, লাভ ইন্টারন্যাশনাল ছিল পরিবেশকও। কাহিনি চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছিলেন শিবলী সাদিক সাহেব, বলতে গেলে তার সেরা কাজ এটি। তাকে সহযোগিতা করেছেন শিষ্য সোহানুর রহমান সোহান, সংলাপ লিখেছিলেন কবি জিয়া আনসারী, ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন সদ্য প্রয়াত মাহফুজুর রহমান খান, সম্পাদনায় মজিবুর রহমান দুলু, গান লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর মনকাড়া সুরের কাজটি সেরেছেন আলম খান সাহেব। এই যখন একটি ছবির টেকনিক্যাল ডাটা তখন বুঝতে হবে ছবিটির মান কোন উঁচুতে বেঁধেছে বাসা।
শুধু ছবিই না, মনে বাসা বেঁধেছিল এর সবকটি গানও। বিশেষ করে ছবির টাইটেল গান অ্যান্ড্রু কিশোরের দরদ ভরা গলায় ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’ যেন এখনো হৃদয়কে দুমড়ে মুচড়ে দেয়, এই একটি গান যেন পুরো ছবির ভাষা বলে যায়। বিশেষ করে ছবিটির মুক্তির আগে রেডিওর সেই বিজ্ঞাপনে গানটির মর্যাদা ছিল সবচেয়ে বেশি, গানের কথার সঙ্গে সুর আর অ্যান্ড্রু দা’র দরদ মাখা কণ্ঠের আবেদনে এখনো গানটি সবার অন্তরে বসবাস করছে। অন্যান্য গানের মধ্যে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’, ‘পেয়েছি চাচি পেয়েছি ও চাচা’, ‘তুইতো কাল চলে যাবি আমাকে ছেড়ে’ গানগুলোও এখনো জনপ্রিয়।
ভিডিও লিংক…