সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ চারজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার লিটন কৃষ্ণদাসের পক্ষে আইনজীবী সুমন কুমার রায় এ নোটিশ পাঠান। এরই প্রেক্ষিতে নাটকটির প্রচার স্থগিত করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্মাতা আবু হায়াত বলেন, ‘প্রযোজনা সংস্থার সাথে একটু আগেই কথা বলে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বী ভাই বোনেরা নাটকটি না দেখেও এটির প্রতি আপত্তি জানিয়েছেন, আমরা দূর্গাপূজার এই উৎসবকে রঙিন করতে ও আপনারা যেনো কোনও কারণে মনে কষ্ট নিয়ে না থাকেন সে জন্য বিজয়া নাটকটির প্রচার আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আপনাদের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনান্তে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আমরা নিব। ভবিষ্যতে পূজা উপলক্ষে আমি আর কোনও টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করবো না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ধন্যবাদ সবাইকেই। আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজার শুভেচ্ছা রইলো।’
এই নির্মাতা বলেন, আমি একজন শিল্পী। পরিচালক হিসেবে নানা গল্প, নানা চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলা একজন পরিচালকের শিল্পের ক্ষুধাই বলা যায়। আমি যখন কাজ করি, আমার ইউনিটে ৩০-৪০ জন সদস্য থাকে। লাইট, ক্যামেরা, প্রোডাকশন, এডিটর, ডিওপি, আর্টিস্ট, মেকাপ, পরিবহন, সেট প্রপসসহ নানা ডিপার্টমেন্টে তারা কাজ করে। এখানে নানা ধর্মের বন্ধুরা থাকে। এখন পর্যন্ত কোনও দিন মনেই হয়নি অমুক এই ধর্মের, সে ওই ধর্মের। কারণ আমরা একটা পরিবার হয়ে কাজ করি। এটাই আমাদের বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিস্টিান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে। যখন কাউকে বলতে শুনি এই মুসলমান অভিনেতা বা ঐ হিন্দু অভিনেত্রী এটা করতে পারবেনা, ওটা করতে পারবেনা, এটা খুবই দুঃখজনক।
নাটকে ধর্মীয় অবমাননার কিছুই নেই উল্লেখ করে আবু হায়াত বলেন, পূজার জন্য একটা কাজ করলাম, নাম ‘বিজয়া’। কাজটি করার পর থেকে আমাদের কিছু ভাই উত্তেজিত হয়ে, বলতে চাচ্ছেন এ নাটকে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে, তাদের ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে। যে কাজটির প্রচারতো দূরে, টিজার, প্রোমো বা কোনও কিছুই প্রকাশ হয়নি এটি কেমন করে ধর্মকে অবমাননা করলো আমি বুঝতে পারছিনা। আমরা অন্য ধর্মের অবমাননা হতে পারে তেমন কিছু কখনোই করবোনা। কারণ এমন কিছু করলে শুধু আপনিই কষ্ট পাবেননা, আমার সহকর্মী ভাইটিও কিন্তু কষ্ট পাবে।
তিনি বলেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চরিত্রের প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়, এটা শুধু এ দেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই। আর এভাবে হিন্দু-মুসলমান উল্লেখ করে বলাটাও কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আঘাত করা। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চাই। ঈদে আমরা যেমন সবাই উৎসবে শামিল হই, পূজাসহ সকল ধর্মের এই রঙিন উৎসব গুলোতেও আমরা ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে উৎসবে অংশগ্রহণ করতে চাই।
আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, বিজয়া নাটকের মাধ্যমে সনাতনী সম্প্রদায়কে কটাক্ষ, নারীকে বিতর্কিত চরিত্রে উপস্থাপন, ধর্মান্তরকরণে উৎসাহ ও সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া হয়েছে। এ নাটকে তিশার সঙ্গে অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ, রচনাকারী সালেহ উদ্দীন সোয়েব চৌধুরী ও পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ ভূঁইয়াকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে নাটকটি প্রত্যাহার না করলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।
ধর্মানুভূতিতে আঘাত: তিশাসহ ৪ জনকে আইনি নোটিশ
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন