একটি মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় চট্টগ্রামের সংগীতশিল্পী ফাহমিদা রহমানকে ব্যতিক্রমী সাজা দিয়েছেন আদালত। মামলায় দোষী হওয়ায় তিনি ছয় মাস সাজা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারক এই শিল্পীকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন―গান শেখানো এবং গান গেয়ে প্রাপ্ত সম্মানির টাকায় নজরুলের বই বিতরণের বিনিময়ে।
দণ্ডিত আসামি ফাহমিদা রহমান বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী।
তিনি চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি করেন।
ব্যক্তিক্রমী এই রায়টি ঘোষিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শরীফুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীর আইনজীবী মো. কামরুল আযম চৌধুরী।
রায় অনুযায়ী, আগামী ছয় মাস ফাহমিদা রহমান বিনা বেতনে সংগীতের শিক্ষার্থীদের গান শেখাবেন এবং তাঁর গাওয়া গানের বিপরীতে বেতার ও টেলিভিশন থেকে প্রাপ্ত সম্মানীর টাকা দিয়ে কবি নজরুল ইসলাম বা তাঁকে নিয়ে লেখা বই কিনে শিল্পকলা একাডেমিতে জমা দেবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি তদারক করবে এবং পরবর্তী সময়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে।
রায়ের বিষয়ে বাদীর আইনজীবী কামরুল আযম চৌধুরী বলেন, আসামি মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলার বাদীর মানহানি করেছেন বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত। এই অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বদলে আসামিকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে থাকার সুযোগ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে আদালতে উল্লেখ করেছেন, আসামি একজন নারী সংগীতশিল্পী। তাই তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বদলে ছয় মাস পর্যন্ত বিনা বেতনে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গান শেখাতে হবে। এ ছাড়া আসামিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে ফ্রিতে দুটি গান গাইতে হবে। অথবা দুটি গানের সম্মানীর টাকায় কবি নজরুল ইসলাম বা তাঁকে নিয়ে লেখা বই কিনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দিতে হবে। এসব কর্ম সম্পাদিত হয়েছে কি না তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করতে হবে। আর শর্ত ভঙ্গ হলে সেটাও আদালতকে অবহিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া শর্ত ভঙ্গ হলে আদালত আসামিকে কারাদণ্ড দিতে পারেনও উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠক করেন চট্টগ্রামের শিল্পীরা। বৈঠক শেষে বের হয়ে সার্কিট হাউস চত্বরে বেতার-টেলিভিশনের আরেক শিল্পী আলাউদ্দিন তাহেরকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেন ফাহমিদা। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ফাহমিদার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন আলাউদ্দিন তাহের। ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ফাহমিদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন।