ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শুটিং সেটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে দগ্ধ হয়ে পুড়ে যায় অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ।
স্ট্যাটাসে নিজের বর্তমান অবস্থা জানিয়ে এই অভিনেত্রী লেখেন, এখন আমি অল্প অল্প হাঁটতে পারি, একটু একটু করে হাত মুঠ করতে পারি, আগের মতো কথা বলতে পারি, কষ্ট করে নিজের হাতে খেতেও পারি, সবকিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে। নিজেকে মনে হয়, আমি একটা নিউবর্ন বেবি। এটা আমার জন্য সেকেন্ড লাইফ। আমার বাম হাতে এখনো শক্তি ফিরে পাইনি। হাতটা অনড় করে রাখতে হবে আরো বেশ কিছুদিন। তারপর ধীরে ধীরে এই হাতেরও শক্তি ফিরিয়ে আনব, ইনশাআল্লাহ।
যেদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেই দিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে আঁখি তুলে ধরলেন এভাবে- যেদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম আমার দুই হাত-পা ডিপ বার্ন আর মুখ সুপার ফেসিয়াল বার্ন, সঙ্গে শ্বাসনালিও আক্রান্ত ছিল। এতটাই খারাপ অবস্থায় ছিলাম, চিকিৎসক নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না আমি ফিরে আসতে পারব কি না। যখন আইসিইউতে ছিলাম তখন বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৩০ শতাংশ।
হাসপাতালের দিনগুলো কেমন ছিল সেই স্মৃতি তুলে ধরে আঁখি লেখেন, প্রতি রাতে ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বরের ঘোরে শুধু ফ্লাশব্যাকের মতো ফেলে আসা স্মৃতিগুলো চোখের সামনে আসত। মনে হতো মানুষ তার অন্তিম মুহূর্তে এভাবেই বুঝি ভালো স্মৃতিগুলো দেখতে দেখতে চলে যায়। কিন্তু এই ভালো স্মৃতিগুলোই আমাকে ফিরে আসতে শক্তি জুগিয়েছে। আমি বোঝাতে পারব না গত দু-মাস ধরে কী কঠিন যুদ্ধ আমাকে করতে হচ্ছে। আমার এক একটা রাতের অসহ্য যন্ত্রণা শুধু আমি জানি।
যোগ করে এই অভিনেত্রী লেখেন, আইসিইউতে সারারাত আশপাশের রোগীদের আর্তচিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠত শরীর আর মন। ভারি হয়ে উঠত বাতাস। প্রতি রাতেই কেউ না কেউ এই যন্ত্রণার কাছে হার মেনে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। প্রতিদিন সকালে কোনো না কোনো বেড খালি দেখে বুঝে নিতাম আরেকজন পরাজিত হলো। অসহ্য যন্ত্রণায় দিনরাত কাতরেছি, ধৈর্যশক্তির অধিক ধৈর্য ধারণ করে সব যন্ত্রণা গিয়েছি, আর একটা কথাই বলেছি বারবার। মনোবল ভাঙা যাবে না, শেষবিন্দু পর্যন্ত চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ সত্যিই মহান। আল্লাহ স্বয়ং তার রহমতের চাদর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলেই আমি বেঁচে ফিরেছি।
কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আঁখি লেখেন, বিশেষ কিছু মানুষের দোয়া, ভালোবাসার কথা আমি কখনই ভুলব না। বার্ন ইন্সটিটিউটের চিকিৎসকরা, বিশেষ করে ডা. সোহান আরজু আপু যেভাবে যত্ন নিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট করেছেন, এক পোস্টে আপনার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। ইবনে হাসান ভাই, আপনি প্রতিদিন যেভাবে খোঁজ নিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে যেভাবে সাহস জুগিয়েছেন, চরম বিপদে যেভাবে পাশে থেকেছেন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার ভাষা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। আপনি আমার এই নতুন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবেন সবসময়।
ঊর্মিলা আমার মুমূর্ষু অবস্থায় তোমার এত কুইক রেসপন্স- যেভাবে প্রতি মুহূর্তে পাশে ছিলে, তুমি না থাকলে সবকিছু এত সহজ আর দ্রুত হতো না। আল্লাহ তোমাকে আরো বড় করুক। কৃতজ্ঞ আমি আমার সংগঠন অ্যাক্টরস ইকুইটির কাছে প্রথম দিন থেকে আমার পাশে ঢাল হয়ে থাকার জন্য। ফাহাদ ভাই, আমি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই আপনি ইমার্জেন্সিতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
রুপেল ভাই আপনিই প্রথম আমাকে সাহস দিয়ে বলেছেন- আপনারা সবাই আমার পাশে আছেন। মৌসুমী তোমার সেই জ্বালাময় বক্তব্য আইসিইউতে আমাকে যে কি বুস্ট-আপ করেছে, ওই মুহূর্তে আমার এমন কিছুরই দরকার ছিল। রনি তুমিও আমার মতো একটা কঠিন সময় পার করেছ এই বার্ন ইন্সটিটিউটে। আমার যন্ত্রণা একমাত্র তুমি বুঝবে কী গেছে আমার ওপর দিয়ে। থ্যাংকস আমাকে সাহস দিয়ে যাওয়ার জন্য।
পিকুল ভাই তুমি এভাবেই চুপচাপ ভালোবাসা আর দোয়া করে যেও। মিঠু আপা তুমি পুরাই একটা ভালোবাসার ডিব্বা, তোমার বানানো জাউ ভাত আমি আবার খেতে চাই। মুন্না ভাই আমি শুঁয়োপোকার খোলস থেকে প্রজাপতি হয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। হাসিব বন্ধু বুস্ট ইজ দ্য সিক্রেট অব আওয়ার অ্যানার্জি। আতিকা, জয়ী, লারা, আইরিন, ইমতু, সাফাত, তন্বি তোদের নিয়ে কিছু বলব না। আমাকে জলদি বাসায় নিয়ে চলো।
পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো ছয় মাস সময় লাগবে-এমনটিই ইঙ্গিত মিললো আঁখির স্ট্যাটাসের সবশেষ প্রান্তে এসে। এই অংশে তিনি লেখেন, আগামী ৬ মাসের যুদ্ধটাও অনেক কঠিন। মন শক্ত করে যেন এই যুদ্ধটাও জিতে ফিরতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে। আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, যেভাবে আমাকে সাহস দিয়ে গেছেন, বার্ন ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক, নার্স, ফিজিও সকলের যে সেবা আর ভালোবাসা আমি পেয়েছি, আমার সকল সহকর্মী, কলিগ যারা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা।