আজাদ আবুল কাশেম: বিশিষ্ট অভিনেতা কে এস ফিরোজ-এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২০ সালের ৩১ আগষ্ট, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
কে এস ফিরোজ (খন্দকার শহিদউদ্দিন ফিরোজ) ১৯৪৬ সালের ৭ জুলাই, ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এ জে এম সাইদুর রহমান, মা রাবেয়া খাতুন।
জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় থেকেই অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন কে এস ফিরোজ। তাঁর অভিনীত প্রথম মঞ্চনাটক ‘আগুন্তক’। একসময় নাট্যদল ‘থিয়েটার’ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে, পেশাদারী মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন তিনি।
থিয়েটারের হয়ে ‘কিং লেয়ার’, ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’ ‘মেরাজ ফকিরের মা’, ‘রাক্ষসী’সহ বেশকিছু মঞ্চনাটকে অভিনয় করে বেশ পরিচিত পান । বিশেষ করে ‘কিং লিয়ার’ মঞ্চনাটকে নাম ভূমিকায় চমৎকার অভিনয় করে প্রশংসিত হন।
১৯৬৫ সালে, টেলিভিশন নাটকে প্রথম অভিনয় করেন কে এস ফিরোজ। মনিরুল আলম প্রযোজিত নাটকের নাম ‘প্রচার’ । এরপরে বহু নাটকে বৈচিত্রময়সব চরিত্রে সফলভাবে অভিনয় করে গেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত নাটকসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- দীপ তবুও জ্বলে, একদিন যখন, কুসুম ও কীট, প্রতিশ্রুতি, পূর্ব রাত্রি পূর্বদিন, জোনাকি জ্বলে, অয়োময়, সেই এক মানুষ, জীবন ঘঁষে আগুন, শেষ বিকেলের রোদ, স্পর্শ, মহানীশা, তিতির ও শঙ্খচিল, সমুদ্রে গাঙচিল, গাঙচিল ভালোবাসা, প্রতিদ্বন্ধী, দুপুরে হাসনাহেনা, প্রাচীর পেরিয়ে, জলাশয় কতদূর, প্রভৃতি।
কে এস ফিরোজ বেশকিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে- লাওয়ারিশ, তুমি আমার, নদীর নাম মধুমতী, শঙ্খনাদ, বাঁশি, এক মন এক প্রাণ, রঙ্গীন দেবদাস, শিখণ্ডী কথা, চন্দ্রগ্রহণ ও বৃহন্নলা অন্যতম।
কে এস ফিরোজ কর্মজীবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ইউএনডিপি, বিআরটিএ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নাট্যদল ‘থিয়েটার’ এর সভাপতিও ছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে কে এস ফিরোজ ১৯৭৪ সালে, মাধবী’র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নাদিয়া, সাদিয়া ও রাবেয়া নামে তাদের তিন কন্যাসন্তান রয়েছে।
মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে যুগপৎ অভিনয় করে গেছেন কে এস ফিরোজ। কর্মজীবনে ব্যস্ততার মধ্যেও অভিনয়কে ভালোবেসে মঞ্চ, টিভি, বেতার ও চলচ্চিত্রে যুক্ত ছিলেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত । জীবনের শেষঅবধি অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন। নিজ অভিনয় গুণে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, প্রশংসিত হয়েছেন, দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন একজন ভালো অভিনেতা হিসেবে।
শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের কাছে অতি ভদ্র-অমায়িক ও খুব ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন অভিনেতা কে এস ফিরোজ। অভিনয় অনুরাগী এই শিল্পী, অনন্তলোকে ভালো থাকুন- এই আমাদের প্রার্থণা।