“বাবা” শব্দটার কাছে আমার অনেক পাওনা। আমি আমার বাবাকে বুড়ো হলে ঠিক কেমন লাগতো তা দেখতে পারিনি। বাবার সব চুল পেকে গেলে তাকে কেমন লাগতো দেখতে পারিনি। জীর্ণ-শীর্ণ শরীর, কিংবা কুঁচকে যাওয়া চামড়া, এক এক করে মুখের সব দাঁত পরে যাওয়ার পর ঠিক কেমন লাগতো বাবাকে? দেখতে পারিনি।
তার কোনো মেয়ের বিয়েতে, আয়োজন কেমন করে করতো? দেখতে পারিনি। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর জন্য গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় দেওয়ার সময় ঠিক কী করতেন? আমি দেখতে পারিনি। তার নাতি-নাতনি হলে তাদের সাথে কেমন করে মিশতেন? দেখতে পারিনি।
এসবই পাওনা রয়ে গেছে বাবা নামক এই শব্দটার কাছে, এই মানুষটার কাছে!
কিন্তু তিনি আমার স্বপ্নে আসেন, বাস্তবের মতন করেই আসেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বছর পঞ্চাশে আটকে যাওয়া এই মানুষটাকে স্বপ্নে আমি কথা বলতে দেখিনি আর, শুধু মুচকি হাসতে দেখি, আমাকে সাহস দিতে দেখি।
হয়তো একদিন আমার বয়স বেড়ে যাবে। যদি বেঁচে থাকি কোনো একদিন আমার ষাট-সত্তর পেড়িয়ে যাবে, তাও আমি ওই বছর পঞ্চাশের বাবাটাকেই দেখব। তিনি হয়তো তখনো মুচকি হাসবেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন।
মেয়েদের জীবনের একমাত্র পুরুষ তার বাবা, যাকে সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে। আমিও বিশ্বাস করি অন্তত আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবা আমার সাথেই থাকবে।
আজ পবিত্র ২৭ শে রমজান, আব্বুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। তার বড় সন্তান হিসেবে আমার বিশ্বাস তিনি ভালো আছেন। তার সব দায়িত্ব একে একে পালন করছি। আর যাই হোক, অন্তত তার পরিবার নিয়ে তাকে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। তিনি হয়তো এজন্যই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন, আর মুচকি হাসেন….। তবে আমরা হাসতে পারি না। পৃথিবী এমনই, “যে ছেড়ে চলে যায় তার কষ্ট কম হয়, যাকে ছেড়ে চলে যায় তার কষ্টই বেশি হয়” …।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)