এ কে আজাদ: সোহেল চৌধুরী। চিত্রনায়ক-মডেল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে কজন সুদর্শন নায়ক এসেছে, সোহেল চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। ছিলেন দেশীয় চলচ্চিত্রে একজন ফ্যাশনেবল চিত্রনায়ক। সম্ভাবনাময় সুদর্শন এই চিত্রনায়কের আয়ুষ্কাল ছিল খুবই স্বল্প। আততায়ীর বন্দুকের তপ্তগুলিতে নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।
আজ থেকে ২৬ বছর আগে, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ঢাকার বনানীতে আততায়ীর বন্দুকের গুলিতে নিহত হন সুদর্শন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৫ বছর। অকাল প্রয়াত এই নায়কের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
সোহেল চৌধুরী (সুলাইমান চৌধুরী সোহেল) ১৯৬৩ সালের ১৯ অক্টোবর, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী । মা নূরজাহান বেগম । সোহেল চৌধুরী এক অভিজাত ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন ।
সুদর্শন ও ফ্যাশনেবল সোহেল চৌধুরী, ৮০ দশকের শুরুর দিকে সেঞ্চুরি ফেব্রিক্সের মডেল হিসেবে শো-বিজে আসেন। সেসময় বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কাড়েন তিনি।
১৯৮৪ সালে, এফডিসি আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সোহেল চৌধুরীর । সেই বছরেই নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী পরিচালিত ‘পর্বত’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। সোহেল চৌধুরী অভিনীত অন্যান্য ছবি- ভাই বন্ধু, লক্ষ্মীবধূ, হীরামতি, বিরহ ব্যথা, দাঙ্গা ফ্যাসাদ, বীরবিক্রম, পাপীশত্রু, টার্গেট, জুলি, পরমা সুন্দরী, কোবরা, দুঃখ নেই, আমার ভালোবাসা, প্রেমের প্রতিদান, কালিয়া, প্রতিশোধের আগুন, বীরযোদ্ধা, দোষী, চিরদিনের সাথী, অবরোধ, লৌহমানব, রাজাগুন্ডা, দেশ-দুশমন, চাঁদাবাজ, বদলা নেব, খুনের বদলা, লেডি ইন্সপেক্টর, আজকের হাঙ্গামা, লেডি স্মাগলার, হিংসার আগুন, প্রেমের দাবি, প্রিয়শত্রু, মৃত্যুদন্ড, মাটিরদুর্গ, মহান বন্ধু, প্রভৃতি ।
ব্যক্তিজীবনে সোহেল চৌধুরী ১৯৮৬ সালে, তাঁর সহ-শিল্পী নায়িকা দিতিকে বিবাহ করেন । নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ ঘটে। দিতির সাথে সাংসারিক জীবনে তাদের দুইটি সন্তান আছে । মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ও ছেলে দীপ্ত চৌধুরী ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে কজন সুদর্শন নায়ক এসেছেন, সোহেল চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। দেশীয় চলচ্চিত্রে স্টাইলিষ্ট বা ফ্যাশনেবল নায়কদের মধ্যে তিনিও একজন। অমিতসম্ভাবনাময় এই নায়ক, নিজের প্রতিভার স্ফুরণ ছড়ানোর আগেই, তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় ঘাতকের তপ্ত বুলেট। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন সুদর্শন-সম্ভাবনাময় নায়কের অপমৃত্যু ঘটে।