English

19 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চিরসবুজ রোমান্টিক নায়ক জাফর ইকবাল

- Advertisements -

এ কে আজাদ: জাফর ইকবাল। চিত্রনায়ক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ফ্যাশনেবল রোমান্টিক চিত্রনায়ক হিসেবে জাফর ইকবাল ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। সেই সময়ে রাগী, রোমান্টিক, জীবন-যন্ত্রণায় পীড়িত তরুণের চরিত্রে, তখনকার প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন তিনি।

যে নায়িকার পর্দা প্রেমিক বা নায়ক হয়ে, জাফর ইকবাল এক সময় অভিনয় করেছন, সেই নায়িকার সন্তান হয়েও তিনি পরবর্তী সময়ে অভিনয় করেছেন। আর তাঁর সঙ্গে নায়িকা ছিল, পরবর্তী সময়ের নতুন নায়িকা। জাফর ইকবাল ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তারুন্যের প্রতীক, চিরসবুজ রোমান্টিক নায়ক। চিরসবুজ নায়ক হিসেবে অবিহিত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চিরসবুজ রোমান্টিক চিত্রনায়ক জাফর ইকবাল এর আজ মৃত্যুবার্ষকী। আজ থেকে ৩১ বছর আগে, ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারী, তিনি মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪১ বছর। অকাল প্রয়াত এই জনপ্রিয় নায়কের প্রতি ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

নায়ক-গায়ক-বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবাল ১৯৫১ সালের ১৯ এপ্রিল, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা এম ফজলুল হক ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী, মা আসিয়া হক।

তাঁর ভাই প্রয়াত আনোয়ার পারভেজ ছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। বোন শাহনাজ রমতুল্লাহ ছিলেন স্বনামখ্যাত একজন কণ্ঠশিল্পী।

জাফর ইকবাল ১৯৬৬ সালের দিকে প্রথম একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। মূলত তিনি ছিলেন গিটারবাদক। ভালো গিটার বাজাতেন বলে সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাঁকে দিয়ে অনেক ছবির আবহসংগীত তৈরি করিয়েছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে জাফর ইকবাল চলচ্চিত্র জগতে আসেন। তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি ‘আপন পর’ মুক্তিপায় ১৯৭০ সালে, পরিচালক ছিলেন বশীর হোসেন। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী।

জাফর ইকবাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। দেখতে সুদর্শন হওয়ায় এবং ভালো প্রশিক্ষণ থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় জাফর ইকবালকে আর্মিতে রিক্রুটিং করা হয়েছিল। কলকাতার ‘ব্লিজ’ পত্রিকায় সে সময় তাঁর ছবিও ছাপা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাফর ইকবাল আবার চলচ্চিত্র অভিনয়ে ফিরে আসেন।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ- ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এতরূপ’, ‘বিচার’, ‘অন্তরালে’, ‘মামা ভাগ্নে’, ‘দূর থেকে কাছে’, ‘মাস্তান’, ‘হারজিৎ’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘পরিণতি’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘সূর্যসংগ্রাম’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘ফেরারী’, ‘আশার আলো’, ‘স্বামীর সোহাগ’, ‘ঈদ মোবারক’, ‘মহারাজা’, ‘মাই লাভ’, ‘দখল’, ‘মেঘ বিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘অপমান’, ‘আশির্বাদ’, ‘পরিবর্তন’, ‘সি আই ডি’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘প্রেমিক’, ‘দুই নয়ন’, ‘চোর’, ‘উসিলা’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘প্রেম বিরহ’, ‘অপেক্ষা’, ‘মর্যাদা’, ‘সন্ধি’, ‘মশাল’, ‘যোগাযোগ’, ‘অবদান’, ‘সাহস’, ‘ভুল বিচার’, ‘ছোবল’, ‘আবিষ্কার’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘অবুঝ হৃদয়’, ‘জবাব চাই’, ‘আকর্ষণ’, ‘সাজানো বাগান’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘গর্জন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘সোনার পাল্কী’, ‘দোষী’, ‘আদরের বোন’, ‘বাসনা’, ‘লক্ষ্মীর সংসার’, ‘ঘর ভাঙ্গা ঘর’, ‘সুখ’, ‘বন্ধু আমার’, ‘চোরের বউ’, ‘মহা শত্রু’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘কবুল’ প্রভৃতি।

অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গান গাইতে পারতেন জাফর ইকবাল। ‘ফকির মজনুশাহ’ ও ‘বদনাম’ ছবিসহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে নেপথ্য কন্ঠও দিয়েছেন। বিশেষ করে আনোয়ার পারভেজের সুরে নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত-অভিনীত ‘বদনাম’ ছবি’র এই গানটি- ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো আমিতো এখন আর নই কারো’ সেই সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। বাংলাদেশ টেলিভশনেও তিনি অনেক গান করেছেন। তাঁর গাওয়া ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’….., এখনো শ্রোতাদের মনে শিহরণ তোলে। এসব গান তাঁর কণ্ঠশিল্পী সত্ত্বার পরিচয় বহন করে।

বাংলাদেশ টেলিভশনে জাফর ইকবাল অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেছন। মডেল হিসেবেও ছিলেন বেশ জনপ্রিয়।

ব্যক্তিজীবনে জাফর ইকবাল ১৯৭৭ সালে, সোনিয়াকে বিয়ে করেন। সোনিয়া সে সময়ে জনপ্রিয় মডেল ছিলেন। জাফর ইকবাল-সোনিয়া দম্পতীর দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। শাদাব জাফর ও জায়ান জাফর।

জাফর ইকবাল ছিলেন আবেগপ্রবণ এবং দারুণ অভিমানী এক শিল্পী, অসাধরন মানুষ। তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের আকাশচুম্বী অবস্থানে থাকা অবস্থায় তিনি লিভার সিরোসিস-এ আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে, লাখো দর্শক-ভক্তদের কাঁদিয়ে, বড় অসময়ে চলেযান অনন্তলোকে।

লাখো-কোটি ভক্ত-দর্শকদের ভালবাসার সোনালী রোদে উজ্জ্বল-অমলিন থাকবে চিরদিন~ প্রিয় নায়ক জাফর ইকবাল।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন