English

25 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ‘ক্যাপ্টেন খ্যাত’ এহতেশাম-এর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: এহতেশাম। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক ও প্রদর্শক। এদেশের প্রথম ব্যবসাসফল জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালক তিনি। একসময় তাঁর নামেই ছবি চলত, দর্শকেরা ছবি দেখার জন্য সিনেমা হলে ভীড় জমাতেন। একের পর এক বাণিজ্যসফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে একটি শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি রূপে দাঁড় করানোয় তাঁর রয়েছে অনন্য অবদান।

এদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর দূরদর্শীতা ও নেতৃত্বের কারণে চলচ্চিত্রসংশ্লষ্টরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে ‘ক্যাপ্টেন’ উপাধি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ‘ক্যাপ্টেন খ্যাত’ এহতেশাম-এর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। আজকের এই দিনে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

এহতেশাম (আবু নূর মোহাম্মদ এহতেশামুর রহমান) ১৯২৫ সালের ১২ অক্টোবর, ঢাকার বংশালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ ছিলেন ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক এবং মা মোছাম্মত কানিজ ফাতেমা গৃহিণী। তাঁর ছোট ভাই চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মুস্তাফিজ।

চলচ্চিত্র পরিচালক ই আর খান ছিলেন তাঁর মামা, পুরান ঢাকার তথা উপমহাদেশের বিখ্যাত চিকিৎসক হেকিম হাবিবুর রহমান তাঁর নানা ছিলেন। খ্যাতিমান চলচ্চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন তাঁর মামাতো ভাই। তাঁর ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক মুশতাক। নায়ক নাদিম তাঁর জামাতা।

এহতেশাম প্রথমে ‘সেন্ট গ্রেগরী স্কুল’ ও পরে ‘আরমানিটোলা স্কুলে’ লেখাপড়া করেন। তারপরে ভারতে সিনিয়র ক্যামব্রিজ পাস করেন। প্রথম চাকুরীজীবনে তিনি জি.আই.পি রেলওয়েতে ট্রাফিক কন্ট্রোলার হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তিতে কিং কমিশনে অফার পেয়ে ব্রিটিশ ভারতের সেনাবহরে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগদেন। পাকিস্তানের করাচিতে হয়েছিল তাঁর বদলি। ওই দায়িত্বে থাকার সময়ই পাকিস্তানের নির্মাতা আশিক মল্লিকের ‘বাঘী’ সিনেমার স্যুটিং দেখতে গিয়ে তাঁর মনে কৌতূহল জন্মায় সিনেমার চিত্রধারণ কীভাবে হয়? সেখান থেকেই শুরু চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর আগ্রহ।
১৯৪৬ সালে চাচাতো বোন নাজমা’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এহতেশাম। ১৯৪৭ সালে, দেশভাগ হলে ঢাকায় চলে আসেন।

এহতেশাম প্রথমে প্রদর্শক হিসেবে চলচ্চিত্রের ব্যবসার সাথে জড়িত হন। লালমনিরহাট রেলওয়ে ইনস্টিটিউট থেকে হল লিজ নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবসা শুরু করেন। তারপর নাটোর ও সান্তাহারে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৫৬-৫৭’র দিকে গঠন করেন পরিবেশনা সংস্থা ‘লিও ফিল্মস্’।

পরবর্তিতে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক হন তিনি। চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপও লিখেছেন।
এহতেশাম পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘এ দেশ তোমার আমার’ মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। বিনোদনধর্মী-ব্যবসাসফল ছবি’র খ্যাতিমান নির্মাতা এহতেশাম প্রযোজিত ও পরিচালিত অন্যান্য ছবিসমূহের মধ্যে- রাজধানীর বুকে (পরিচালনা ও প্রযোজনা), হারানো দিন (প্রযোজনা), চান্দা (পরিচালনা ও প্রযোজনা), নতুন সুর (পরিচালনা), সাগর (পরিচালনা), তালাশ (প্রযোজনা), মালা (প্রযোজনা), চকোরী (পরিচালনা), ছোট সাহেব (প্রযোজনা) চাঁদ আউর চাঁদনী (প্রযোজনা ও পরিচালনা), আনাড়ি (প্রযোজনা), পায়েল (প্রযোজনা), পীচঢালা পথ ( প্রযোজনা ও পরিচালনা), দূরদেশ (পরিচালনা), শক্তি (পরিচালনা), চাঁদনী (পরিচালনা), চোখে চোখে (পরিচালনা), চাঁদনী রাতে (পরিচালনা), সৈনিক (পরিচালনা), মৌমাছি (পরিচালনা), পরদেশি বাবু (পরিচালনা ও প্রযোজনা) ইত্যাদি।

এহতেশাম যেমন ছিলেন ব্যবসাসফল জনপ্রিয় ছবি’র গুণি নির্মাতা, তেমনই ছিলেন জনপ্রিয় তারকা গড়ার কারিগর। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি যেসব তারকা উপহার দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন- নায়ক আনিস (খান আতা), রহমান, আজিম, নাদিম, নাঈম। নায়িক সুমিতা দেবী, চিত্রা সিনহা, শবনম, শাবানা, শাবনাজ, শাবনুর। তাঁর হাত ধরে আরো এসেছেন অভিনেতা সুভাষ দত্ত, আশীষ কুমার লোহ, খান জয়নুল, গোলাম মোস্তফা, শওকত আকবর, মনজুর হোসেন, এসেছেন সুরকার-সঙ্গীতপরিচালক আলী হোসেন, রবিন ঘোষ, ফেরদৌসী রহমান। চলচ্চিত্রকার হিসেবে আছেন জহির রায়হান, কামাল আহমেদ, আজিজুর রহমান, নজমূল হুদা মিন্টু, সাইফুল আযম কাসেম, ক‍্যামেরা ম‍্যান এ আর নাসের, বদরে আলম, নৃত্য পরিচালক-নায়ক ইলিয়াস জাভেদ।

বাংলাদেশে প্রথম ব্যবসাসফল জনপ্রিয় ছবি’র পরিচালক এহতেশাম। তাঁর নির্মিত ছবি ‘রাজধানীর বুকে’র- ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’ গানটি তখনকার সময়ে সবার মুখে মুখে ফিরত (যা এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়)।

একসময় পরিচালক এহতেশামের নাম শুনলেই দর্শকেরা ছবি দেখার জন্য সিনেমা হলে ভীড় জমাতেন।
এই নির্মাতার বেশির ভাগ ছবিই ব্যাপকভাবে ব্যবসাসফল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে একটি শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি রূপে দাঁড় করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন।

তিনি চেয়েছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য দুটোতেই যেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এগিয়ে যায় । বোম্বের জনপ্রিয় শিল্পীদেরও তিনি যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করতেন, ফলে রাজেশ খান্না, শর্মিলা ঠাকুর, প্রেম চোপড়ার মতো অভিনেতা অভিনেত্রীরা বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করে গেছেন।

এহতেশামের সময়উপযোগী-সঠিক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের কারণে চলচ্চিত্রের সবাই তাঁকে শ্রদ্ধাভরে ‘ক্যাপ্টেন’ উপাধি দিয়েছিলেন, অর্থাৎ তিনি ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ‘ক্যাপ্টেন এহতেশাম’ ।

এহতেশাম বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন দিকপাল, বাণিজ্যিক ছবি’র কুশলী নির্মাতা। তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাস্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পুরস্কার তিনি পাননি। আজকের তরুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো এই কীর্তিমান মানুষটিকে চেনেন না, জানেন না। তাই বলে চলচ্চিত্র ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে যাবার নয়। এহতেশাম বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প তথা ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন