আজাদ আবুল কাশেম: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কৌতুক সম্রাট, কিংবদন্তীতুল্য কৌতুক অভিনেতা, খান জয়নুল-এর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের ১৫ জানুয়ারী, মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত খান জয়নুলের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি প্রার্থনা করি।
তখনকার সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই অভিনেতা, ১৯৩৬ সালের ৪ জুলাই, মুনশীগঞ্জের লৌহজং থানার রানাদিয়া গ্রামে, জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকে তাঁর অভিনয় করার শখ ছিল। ১৭ বছর বয়সে যখন গোপালগঞ্জের এক স্কুলে পড়তেন তখন তিনি নাটকে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। ক্রমেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। এক সময় কলকাতায় চলে যান ছবিতে অভিনয় করার উদ্দেশ্যে। খান জয়নুল- নাম পরিবর্তন করে ‘মৃণাল কান্তি রায়’ নামে কোলকাতার কিছু ছবিতে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করেন।
দেশ ভাগের পর তিনি চলে আসেন ঢাকায়। এখানে এসে মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করার পাশাপাশি নাটক লেখালেখি শুরু করেন। কিছুদিন তিনি সাংবাদিকতাও করেন সাপ্তাহিক ‘পূবালী’ পত্রিকায়।
ঢাকার চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম আবির্ভাব ঘটে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে। তুমূল জনপ্রিয় অভিনেতা খান জয়নুল অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে- দুই দিগন্ত, ১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন, সখিনা, সাইফুল মুল্ক বদিউজ্জামাল, কাঁচ কাটা হীরে, সন্তান, পদ্মা নদীর মাঝি, দর্পচূর্ণ, মধুমালা, সপ্তডিংগা, ময়নামতি, যে আগুনে পূড়ি, মিশরকুমারী, অন্তরঙ্গ, নীল আকাশের নীচে, মায়ার সংসার, রং বদলায়, মধু মিলন, ঢেউয়ের পর ঢেউ, নায়িকা, আদর্শ ছাপাখানা, মাটির মায়া, অশান্ত ঢেউ, দিনের পর দিন, স্মৃতি তুমি বেদনা, নাচের পুতুল, পীচ ঢালা পথ, ত্রিরত্ন, ইয়ে করে বিয়ে, ঝড়ের পাখি, মানুষের মন, দাসী, প্রতিশোধ, অবুঝ মন, ছন্দ হারিয়ে গেলো, পায়ে চলার পথ, কে তুমি, সতী নারী, জীবন তৃষ্ণা, মাসুদ রানা, চোখের জলে, আঁধারে আলো, বাদী থেকে বেগম, দূর থেকে কাছে, ভুল যখন ভাঙ্গলো, আলোর মিছিল, পরিচয়, দুই পর্ব, জীবন সাথী, সন্ধিক্ষণ, ডাক পিওন, সাধু শয়তান, আদালত, গোপাল ভাঁড়, দিওয়ানা, অন্যতম।
বেশীরভাগ ছবিতে কৌতুকাভিনয় করলেও, কোনো কোনো ছবিতে তিনি সহনায়ক ও আবেকঘন-গুরত্বপুর্ণ চরিত্রেও অভিনয় করেছেন কৃতিত্বের সাথে।
টেলিভিশনের অত্যান্ত জনপ্রিয় ‘ত্রিরত্ন’ সিরিজে খান জয়নুল ‘চুনি’ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক শ্রোতাদের মাঝে আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।
নাট্যকার হিসেবেও খান জয়নুল যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাঁর লেখা হাসির নাটক ‘শান্তিনিকেতন’ মঞ্চস্থ হলে তখনকার সময়ে দর্শকদের অকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করে। ‘ঘর মন জানালা’ তাঁর রচিত একটি জনপ্রিয় নাটক ছিল।
‘১৩নং ফেকুওস্তাগার লেন” চলচ্চিত্রটির কাহিনি ও সংলাপ রচয়িতাও ছিলেন তিনি।
শিল্প-সাংস্কৃতিক অংগনের বিরল প্রতিভার অধিকারী খান জয়নুল ছিলেন একাধারে নাট্যসংগঠক, মঞ্চ-বেতার ও টিভি অভিনেতা, নাট্যকার, কাহিনী ও সংলাপ লেখক। সর্বোপরি একজন উচুমানের অভিনেতা। বিশেষ করে কৌতুক চরিত্রের এই জাত অভিনেতা, কৌতুককে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায় । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে, কৌতুককে শিল্প পর্যায় করেছেন উন্নীত। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে অনন্তকাল ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কৌতুক সম্রাট খান জয়নুল অনন্তলোকে ভালো থাকুন, এই প্রার্থণা করি।