এ কে আজাদ: আজমেরী জামান রেশমা। সংবাদ পাঠিকা, উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী। বহু গুণে গুণান্বিতা ও বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন আজমেরী জামান রেশমা। বেতার-টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা ও উপস্থাপিকা। মঞ্চ-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী।
মঞ্চে শিল্পনির্দেশকের কাজ করেছেন এবং নাটক নির্দেশনাও দিয়েছেন। লিখতেনও ভালো, ফ্যাশনচর্চাবিদ হিসেবেও ছিলেন বেশ সুপরিচিত। গানও গাইতেন। পাকিস্তানে থাকাকালীন লাহোর করাচীর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী আজমেরী জামান রেশমা’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০২০ সালের ২০ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেত্রীর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আজমেরী জামান রেশমা ১৯৩৮ সালের ৩১ মার্চ, মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানার ধামারন গ্রামে, জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম অধ্যাপক কাজী আমির হোসেন এবং মাতার নাম বেগম শফিকুননেছা বাহারমান্দ বানু ।
তাঁরা ছিলেন চার বোন। তাঁর ছোট বোন নাজমা আনোয়ার একজন গুণী অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর খালাতো বোন দিলারা জামানও খুব জনপ্রিয় অভিনেত্রী ।
আজমেরী জামান রেশমা, সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন মুন্সিগঞ্জের এ.ভি.জে.এম স্কুলে। পরে ঢাকায় চলে আসেন। ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন মতিঝিল সেন্ট্রাল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে।
ঢাকার হলিক্রস কলেজে পড়াকালীন সময়ে রেশমা, ঢাকা রেডিওতে অনুষ্ঠান ঘোষিকা এবং ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপরে ‘ভয়েস অব আমেরিকায়’, ভয়েস আর্টিস্ট, উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠিকা হিসেবে যোগ দেন। ষাটের দশক থেকে যুক্ত ছিলেন মঞ্চ সংগঠন ‘ড্রামা সার্কেল’র সঙ্গে। মঞ্চে শিল্পনির্দেশকের কাজ করেছেন এবং নাটক নির্দেশনাও দিয়েছেন। পরবর্তিতে তিনি, মঞ্চ, বেতার, টিভি এবং চলচ্চিত্রের সুপরিচিত অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘জিনা ভি মুশকিল’, মুক্তি পেতে অনেক সময় লেগে যায়। তাঁর অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র সৈয়দ শামসুল হক পরিচালিত ‘ফির মিলেংগে হাম দোনো’ মুক্তিপায় ১৯৬৬ সালে। রেশমা অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে- ইন্ধন, ভাওয়াল সন্যাসী, দর্শন, কার বউ, চকোরী, দিল এক শিশা, চাঁদ আওর চাঁদনী, সূর্য উঠার আগে, নয়নতারা, চকোরী, মেঘের পর মেঘ, হালচাল (পাকিস্তানের ছবি), শাহনাই (পাকিস্তানের ছবি), আনোখি আদা (পাকিস্তানের ছবি), মনজিল হায় জাঁহা (পাকিস্তানের ছবি) দো রাহী (পাকিস্তানের ছবি), সোনার হরিন, শেষ উত্তর, আলাদীন আলিবাবা সিন্দাবাদ, সোনার তরী, কুদরত, সুখ দুঃখের সাথী এবং রঙিন রাখাল বন্ধু, অন্যতম।
মঞ্চে ও টেলিভিশনে অনেক ভালো ভালো মানসম্পন্ন নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন আজমেরী জামান। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- ইডিয়ট, সাঁকো পেরিয়ে, এমন একটি মা দেনা, মুখরা রমনী বশীকরণ, রক্তকরবী, শেষের কবিতা, বৃত্ত থেকে বৃত্তে, দিন বদলের পালা, গোর খোদক, দেওয়ান গাজীর কিসসা, প্রভৃতি।
ব্যক্তিজীবনে রেশমা ১৯৬১ সালে, বিশিষ্ট টিভি ব্যক্তিত্ব জামান আলী খান-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান। ছেলে রাহবার খান বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে ইংরেজি সংবাদ পাঠক হিসেবে সুপরিচিত, মেয়ে জয়া খান।
বহু গুণে গুণান্বিতা ও বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, আজমেরী জামান রেশমা। এই অসাধরণ গুণী মানুষটি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে একসময়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
শেক্সপিয়ারের উপন্যাস অবলম্বনে অধ্যাপক মুনির চৌধুরীর নাট্যরূপ দেয়া “মুখরা রমনী বশীকরণ” নাটকে অভিনয় করে, সীমাহীন জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। রেশমার অনবদ্য অভিনয় তখনকার ঋদ্ধ দর্শক মহলে ব্যাপক আলোচিত ও প্রসংশিত হয়।
আমাদের দেশের শিল্প-সংস্কৃতির এই মহিয়সী নারী দীর্ঘদিন নিভৃতে থেকে, অবশেষে লোকান্তরিত হন। আজমেরী জামান রেশমা অনন্তলোকে চিরশান্তিতে থাকুন- এই আমাদের প্রার্থণা।