এ কে আজাদ: আলতাফ। অভিনেতা। একজন প্রতিভাবান ও মেধাবী অভিনেতা ছিলেন আলতাফ।যে কোনো চরিত্রে সুন্দর-সাবলীল অভিনয় করার এক অসাধরণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। সহনায়ক, ভিলেন, কৌতুক, আবেকঘন-গুরত্বপুর্ণ চরিত্র, ট্র্যাজেডি, এমন সব ধরণের চরিত্রে কৃতিত্বের সাথে অভিনয় করে গেছেন। অত্যান্ত উঁচুমানের অভিনেতা আলতাফ-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ১৯৭৮ সালের ২৬ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৬ বছর। অকাল প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আলতাফ (আলতাফ হোসেন) ১৯৪২ সালের ১৩ নভেম্বর, ভারতের নদীয়া জেলার নবদ্বীপ গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন ।দেশ ভাগের পর চলে আসেন ঢাকায়। এখানে এসে নিয়মিত মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন, মঞ্চ থেকে একসময় চলচ্চিত্রে আসেন আলতাফ।
১৯৬৪ সালে ওবায়দুল হক পরিচালিত ‘দুই দিগন্ত’ ছবির মাধ্যমে, চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় শুরু করেন আলতাফ। তাঁর অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে- সুতরাং, সাতরং, ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন, অপরাজেয়, ভাগ্যচক্র, পরশমনি, শীতবসন্ত, অন্তরঙ্গ, আলোর পিপাসা, মধুমালা, চাওয়া পাওয়া, মায়ার সংসার, কঙ্গন, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, টাকা আনা পাই, সূর্য ওঠার আগে, আঁকা বাঁকা, ছদ্মবেশী, কোথায় যেন দেখেছি, কাঁচকাটা হীরে, জলছবি, ওরা ১১ জন, দ্বীপ নেভে নাই, প্রতিশোধ, জীবন সঙ্গীত, রংবাজ, পায়ে চলার পথ, ঘূর্ণিঝড়, আলোর মিছিল, বেঈমান, জীবন সাথী, এপার ওপার, অঙ্গার, অলঙ্কার, দিনের পরদিন, বেলা শেষের গান, চৌধুরী বাড়ি, প্রভৃতি অন্যতম।
জনপ্রিয় অভিনেতা আলতাফ, চলচ্চিত্রের পাশাপাশি, বেতার-টেলিভিশন ও মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করতেন । স্বাধীনতার আগে জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’সহ টেলিভিশনের অনেক নাটকেই তিনি অসাধরণ অভিনয় করেছেন।
এই প্রতিভাবান ও মেধাবী অভিনেতা যে কোনো চরিত্রে সুন্দর-সাবলীল অভিনয় করার এক অসাধরণ ক্ষমতা রাখতেন।
‘এতটুকু আশা’ ছবিতে পোড় খাওয়া এক পরিবারের সন্তান, পা হারানো এক অসহায় যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে, বাংলা ভাষাভাষী সিনেমাদর্শকদের মাঝে আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। এই ছবির একটি বিখ্যাত কালজয়ী গান, মোঃ আব্দুল জব্বারের কন্ঠে আলতাফের ঠোঁটে- ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়..’! গানের এই দৃশ্যে আলতাফ হোসেনের অভিনয় প্রতিভা- ‘ট্র্যাজেডি কিং একজন উঁচুমানের অভিনেতার পরিচয় মেলে।
‘ওরা ১১ জন’ ছবিতে পা হারানো একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে, যিনি যুদ্ধে তাঁর প্রিয় শিশু সন্তানসহ পরিবারের সবাই কে হারিয়েছেন। এমন একটি কঠিন চরিত্রে হৃদয় নিঙড়ানো অভিনয় করে, তিনি তাঁর মেধার-অভিনয়দক্ষতার চুড়ান্ত পরিচয় দিয়েছেন বলে আমি মনে করি।
অসাধরণ গুণী এই অভিনেতা খুব কম বয়সেই মারা যান। মাত্র ১৪ বছরের অভিনয় জীবন ছিল তাঁর। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অভিনেতা আলতাফ- চিরঅমলিন ।