বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নায়ক মান্নার না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার ১৫ বছর হয়ে গেল। ২০০৮ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পসহ সমগ্র দেশবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে সুন্দর এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান মান্না। সেদিন এ নায়কের অকাল ও আকস্মিক মৃত্যু ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।
যে মানুষটি রাত অবধি শুটিং করলেন, প্রিয় কর্মস্থল এফডিসি থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলেন, সকালবেলা জানা গেল তিনি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিস্মিত হতবাক সবাই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে লাগল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন মান্না- এমন সংবাদে যে যেভাবে পারলেন ছুটলেন ইউনাইটেড হাসপাতালে।
১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরবেলা সবাইকে শোকে পাথর করে চিকিৎসকরা জানালেন, মান্না নেই, চলে গেলেন সব বাঁধন ছিঁড়ে। ফিরবেন না আর কোনো দিনই। এমন দুঃসংবাদের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।
তারপরের ঘটনাগুলো আজও সবার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে। প্রিয় নায়ক মান্নাকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য ভক্তদের সে কী উন্মাদনা। এফডিসিজুড়ে আপনজনদের আহাজারি। বিস্ময়ে হতবাক পুরো জাতি। সবার চোখেমুখে অভিব্যক্তি একটাই, সব শেষ।
মান্না শুধু একজন নায়ক কিংবা অভিনয়শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নিবেদিতপ্রাণ একজন সিনেমাপ্রেমী। যার কাজে কর্মে শয়নে স্বপনে ভালো চিন্তায় থাকতো শুধুই চলচ্চিত্র। কী করলে চলচ্চিত্রের ভালো হবে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মান্না কেবল সেটাই ভেবেছেন।
দিনরাত শুটিং করার পর যেটুকু সময় পেতেন, আরাম আয়েশ বিশ্রাম ত্যাগ করে মান্না অনেক বেশি সময় চলচ্চিত্রের জন্যই ব্যয় করতেন। তার জীবনে চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোনো কিছুই ছিল না। মান্নার মতো একজন আপাদমস্তক চলচ্চিত্রপ্রেমী, একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে হারিয়ে গত ১৫ বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্প ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।
পর্দায় প্রতিবাদী নায়ক মান্না ছিলেন বাস্তবেও একটি প্রতিবাদী চরিত্র। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ছিল তার স্বভাব। প্রতিবাদই তাকে দর্শক মনে যেমন স্থায়ী আসন দিয়েছিল, তেমনি চলচ্চিত্র শিল্পেও অদ্বিতীয় করে রেখেছে। দর্শকদের ভালবাসা পাওয়া একজন শিল্পীর জন্য যা সবচেয়ে বড় পাওয়া।
মৃত্যুর পর এফডিসিতে এই মহানায়কের নামে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স হিসাবে একটি ভবন নামকরণ করা হয়। এছাড়া তার স্মৃতি স্মরণে এফডিসি নিয়মিত মান্না উৎসব আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল স্মৃতিচারণমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করে।
১৯৬৪ সালে মান্নার জন্ম হয়েছিল টাঙ্গাইলে। ১৯৮৪ সালে এফডিসিতে আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসেছিলেন চলচ্চিত্রে। পরের ইতিহাস সবারই জানা। অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে নিজেই একটা ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠেছিলেন মান্না।