নাট্যশিল্পী খায়রুল আলম সবুজ। নাট্যকার, প্রযোজক, অনুবাদক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রবীণ এই অভিনেতা আজ ৭৪ বছরে পা দিলেন।
১৯৬৭ সালে করাচির বাংলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৯ সালে বাংলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১২ বছর বয়স থেকে বরিশালে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন খায়রুল আলম সবুজ। তখন মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। তার অভিনীত প্রথম মঞ্চনাটক ‘সূর্যমুখী’। এরপর পড়াশোনা করতে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান।
করাচিতে গিয়ে গান এবং অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন খায়রুল আলম সবুজ। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান তিনি। ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ খায়রুল আলম সবুজ ঢাকায় চলে আসেন। এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। সেখানে ম. হামিদের সঙ্গে ডাকসু নাটক বিভাগ ‘নাট্যচক্র’ গড়ে তোলেন। ম. হামিদ ছিলেন সভাপতি আর সবুজ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘নাট্যচক্র’-এর মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু হয়। মঞ্চে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখানে এখন’, ‘ওথেলো’, ‘সেনাপতি’সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
টেলিভিশনে তার প্রথম কাজ ছিল বিটিভির নাটক ‘জলের রঙে লেখা’। টিভিতে তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘ঢাকায় থাকি’। তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে মামুন চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে পুনে ইনস্টিটিউট থেকে নির্মিত ‘উজান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এরপর তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ছাড়পত্র’-এ অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হলো—‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘মেহেরজান’, ‘শোভনের স্বাধীনতা’, ‘হরিযূপীয়া’, ‘ভয়ংকর সুন্দর’, ‘কারণ তোমায় ভালোবাসি’, ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ প্রভৃতি।
বহুমাত্রিক খায়রুল আমল সবুজ একজন লেখক। তার জনপ্রিয় ধারার পরিচয়ের আড়ালে চাপা পড়ে যায় লেখক পরিচয়টা। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ একটি ছোট গল্পের বই। একসময় তিনি সাহিত্যের পাতায় নিয়মিতভাবে ছোটগল্প লিখতেন। অনেক টেলিভিশন নাটক রচনা করেছেন তিনি। তবে তার সাহিত্য জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য নাটক অনুবাদ। অন্তিন চেখভ, হেনরিক ইবসেন এবং জাঁ আনুই এর আধুনিক নাটকগুলো গভীর প্রত্যয়ে অনুবাদ করেছেন তিনি। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ তার কোনো কোনো অনুবাদ নাটক সম্পাদনা করেছেন। তার অধিকাংশ নাটক প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে।