নাটকের এক জনপ্রিয় গল্পকার টিপু আলম মিলন। পেশাগত জীবনে তিনি বৈশাখী টিভির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক। তার লেখা প্রতিটি নাটকই দারুণ জনপ্রিয়। তার গল্প মানেই হাস্যরসে পরিপূর্ণ। গ্রোগ্রাসে লুফে নেয় তাবত দর্শক। লক্ষ লক্ষ কমেন্টসই প্রমাণ করে দর্শকের কাছে তিনি কতটা জনপ্রিয়। আসন্ন ঈদুল আযহাতেও প্রচার হবে টিপু আলম মিলনের গল্পে ৮ নাটক। এর মধ্যে ৫টি একক ও ৩টি ৭ পর্বের ধারাবাহিক। একক নাটক পাঁচটি হলো, অনন্য ইমনের পরিচালনায় ‘দেনমোহর’, সরদার রোকনের পরিচালনায় ‘বাবু’, মজিবুল হক খোকনের পরিচালনায় ‘সন্দেহ বিবি’, শৌর্য দীপ্ত সূর্যর পরিচালনায় ‘ডিভোর্সী বউ’ এবং বর্ণনাথের পরিচালনায় ‘গরীবের সুন্দরী বউ’।
৩টি সাপ্তাহিক ধারাবাহিকের মধ্যে হানিফ খান ও আহমেদ রোহান খান রুবেলের যৌথ পরিচালনায় ‘বাগান বাড়ি’, আল হাজেনের পরিচালনায় ‘প্রবাসীর টাকার মেশিন’ এবং এস এ হক অলিকের পরিচালনায় ‘কোরবানীর বিরাট হাট’।
গত ঈদুল ফিতরে বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হয় তার লেখা ৬ নাটক। এরমধ্যে তিনটি একক এবং তিনটি ধারাবাহিক। প্রতিটি নাটকই দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘হিল্লা বিয়ে’ নাটকটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করে। রাশেদ সীমান্ত, নাদিয়া আহমেদ, অলিউল হক রুমি অভিনীত সরদার রোকন পরিচালিত ‘হিল্লা বিয়ে’ নাটকটি ইউটিউবে আপলোড করার সপ্তাহ খানেকের মাথায় ৫০ লাখ ভিউ অতিক্রম করে।
টিপু আলম মিলনের নাটকের জন্য গল্প লেখা শুরু খুব বেশি দিনের নয়। ৪/৫ বছর আগের কথা। একটি বিষয় তাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তোলে, তাহলো- দর্শক যেন ক্রমশই টিভি নাটক থেকে মুখ ফিরিয় নিচ্ছে। কিন্তু কেন?
নাটকগুলো যেন বেশির ভাগই গতানুগতিক। দুঃখ-কষ্টে ভরা ব্যথাতুর গল্পের কাহিনী। জীবন সংগ্রামে লিপ্ত মানুষজন সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে নাটকের এসব কষ্ট দেখে তারা আর কাদতে চায় না। তারা একটু সুখ চায়, আনন্দ চায়, নির্মল বিনোদন চায়। এজন্য প্রয়োজন হাসির নাটক। সুপার কমেডি নাটকের মাধ্যমে তাদের যেমন হাসানো যায়, নাটকে একিভূত করা যায়, সেই সাথে সমাজে ঘটে যাওয়া নানা অসংগতিও সুক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করা যায়। এতে করে মানুষ যেমন নির্মল বিনোদন পাবে তেমনি সমাজ সচেতন হয়ে উঠবে। মূলত: এ ভাবনা থেকেই টিপু আলম মিলনের নাটকের গল্প লিখা। আজ তিনি সফল। যে কারণে অতি অল্প সময়ে তার লিখা নাটকগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ, তার লিখা প্রতিটি নাটকই দেশের অতি প্রান্তজনের জন্য। যে কারণে গ্রামের হাটে-ঘাটে, চায়ের দোকানে বসে বসে সেলফোনের স্ক্রিনে তার নাটক দেখে অন্য এক জগতে হারিয়ে যায়। এটা লেখকের পরম পাওয়া। এসব কথা শুনে তিনিও আনন্দিত হন, তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।
টিপু আলম মিলন বলেন, আমার কাছে দেশপ্রেমিকের সংজ্ঞা মানে যে যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। কারণ, পৃথিবী থেকে আমরা একবার চলে গেলে আর ফিরে আসব না। কর্মটাই মানুষ মনে রাখবে। নাহলে কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে আমরাও হারিয়ে যাব অন্ধকারের অমোঘ নিয়মে।
নিজের লেখা নাটকের গল্প নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে টিপু আলম মিলন বলেন, আমার গল্পগুলোকে সাজিয়ে বই প্রকাশ করার ইচ্ছা আমার। ইতোমধ্যেই আমার লেখা গল্পে অসংখ্য নাটক প্রচার হয়েছে। অথচ একটা বইও প্রকাশ হয়নি। শুধু নাটক দেখলেই হবে না। সবাই তো আর নাটক দেখে না, তারা অন্তত আমার গল্পটা পড়বে। এই যেমন ‘বৌ শাশুড়ির গল্প’ দুই শো পর্ব পেরিয়ে গেছে, জমিদার বাড়ি একশো পর্ব পেরিয়ে গেছে। এ দুটো হয়তো গল্প হবে না, উপন্যাস হবে। তারপরও পাঠক অন্তত পড়লো।
আপনার নাটকগুলো এত জনপ্রিয়তার কারণ কি? এমন প্রশ্নে টিপু আলম মিলন বলেন, আমার গল্পের নাটকগুলোতে দুইটা জিনিস থাকে, এক. নাটকের নামে বৈচিত্র্য- যা মজার হতে হবে। আর নাটকের গল্পে একটা বার্তা থাকবে। আমি গল্পগুলো সংগ্রহ করি মানুষের জীবন থেকে। হয়তো সেজন্য অনেকে বলে আমার গল্পের নাটকগুলো জীবন্ত।
জীবন থেকে সংগ্রহ করেন মানে? ঠিক বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলবেন? টিপু আলম মিলন বলেন, আমার জীবনযাপনের প্রতিটি ধাপ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করি। আমার ড্রাইভার একদিন ছুটি চাইলো, আমি বললাম কোথায় যাবে? সে বললো শ্বশুরবাড়ি যাবে- কেন? কারণ সেখানে একটা বাজার হয় নাম জামাই বাজার। ওই বাজারে গিয়ে জামাইরা পছন্দের কেনাকাটা ও বাজার করে। আমি ডিটেইল শুনলাম। তারপর কিছু টাকা তাকে দিলাম বাজার করার জন্য। আমি লিখে ফেললাম নাটক ‘জামাই বাজার।’ বেশ সাড়া ফেলল নাটকটি। এরকম আরো অনেক ঘটনা।
সে সব বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরেকটা ঘটনার কথা বলি। একবার আমাদের সাইটে গিয়েছি। সেখানে আমাদের একটা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কথা শুনলাম কাজের লোকজন মানে শ্রমিক যারা কাজ করছে- তারা চা খেতে যাচ্ছেন ভাবির দোকানে। কৌতুহলি হয়ে ভাবির দোকানে আমিও গেলাম। সেখানে এক কাপ চা খেলাম। আর বুঝলাম আসলে ভাবিকে দেখা আর গল্প করার জন্যই সবাই ভাবির দোকানে যায়। এসে লিখে ফেললাম ভাবির দোকান।
ডার্লিং পয়েন্ট নাটকটার আইডিয়া এসেছে চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে। সেখানে যুগলরা আসতো প্রেম করতে। একবার দেখলাম, চার-পাঁচজন ছেলে, একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছে। তাদের বান্ধবী। তারপর ছেলেরা সরে গেল। মেয়েটা একা একা ঘুরছে। একটা অপরিচিত ছেলে এসে কথা বলা শুরু করলো। মেয়েটাও ভাব জমালো। পরে মেয়ের ওই ছেলে বন্ধুরা এসে আগন্তুক ছেলেটাকে ঘিরে ধরে সবকিছু নিয়ে গেল। সেই ঘটনা থেকে লিখে ফেললাম ডার্লিং পয়েন্ট। এটিও দারুণভাবে লুফে নিল দর্শক। এ রকম অসংখ্য নাটকের প্লট আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ব্যস্ততার কারণেই সব লিখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ধীরে ধীরে সবই লিখে যেতে চাই।
নিজের লিখা নাটক নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা আর আশপাশের মানুষের জীবনের গল্প নিয়েই নাটকের কাহিনী আবর্তিত। হাস্যরসে ভরপুর এ নাটকগুলো করোনাকালে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে কিছুটা বিনোদন দিয়ে থাকে বলে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া বৈশাখী টেলিভিশনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দর্শকদের বিনোদন দেওয়া। কতটুকু পেরেছি সে বিচারের ভার বৈশাখী টেলিভিশনের দর্শকদের, যাদের ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণায় আমাদের এগিয়ে চলা। ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমার লেখা গল্পের নাটকগুলোও দর্শকদের বিনোদন দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সবশেষে বলব ঈদে বৈশাখী টেলিভিশন দেখুন, ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।’