এ কে আজাদ: রেবেকা (রাত্রি রায়, মনজন আরা বেগম)। অভিনেত্রী। এদেশের প্রথম নারী চিত্রপরিচালক। যে সময়ে মেয়েদের ঘরের বাহিরে যাওয়ার বিধীনিষেধ মানতে হতো, বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদের। সেই সময়ে, সেই যুগে রেবেকা একজন মুসলিম নারী হয়েও, শুধু অভিনয়ই করেন-নি, চলচ্চিত্র নির্মাণও করেছেন। এ একজন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক নারীর পক্ষেই সম্ভব। বাংলাদেশের নারীদের চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ সুগম করে দিয়েছেন যে মহীয়সী নারী, আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি আজ থেকে ১৭ বছর আগে, ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। প্রয়াত এই গুণি মানুষটির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
রেবেকা (রাত্রি রায়, মনজন আরা বেগম) ১৯৪১ সালের ১১ মার্চ, পাবনা জেলার পৈলানপুরে, জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর দাদা যাত্রা দলের শৌখিন শিল্পী ছিলেন, বাবাও মঞ্চে নাটকে অভিনয় করতেন। এসব দেখেই রেবেকাও শৈশব
থেকে মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে আর মঞ্চে অভিনয় করা হয়নি।
একসময় স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে আসেন রেবেকা। আর স্বামীর সহযোগীতায়ই চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান।
১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জিল্লুর রহিম পরিচালিত ‘এইতো জীবন’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি।
রেবেকা অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলো হলো- মালা, বাহানা, উলঝান, ছোট সাহেব, ডাকবাবু, ১৩নং ফেকুওস্তাগার লেন, কার বউ, আগুন নিয়ে খেলা, মানুষ অমানুষ, শনিবারের চিঠি, বিন্দু থেকে বৃত্ত, প্রভৃতি।
রেবেকা পরিচালিত একমাত্র চলচ্চিত্র ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’, মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে। এ ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ তাঁরই লেখা। ছবিটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে সারা পাকিস্তানে। ছবিটি সে সময়ে সুধীমহলে বেশ প্রসংশিত হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছবিটি সম্পর্কে লেখা-লেখিও হয় প্রচুর।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য রেবেকা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্মাননাও পেয়েছেন। ১৯৬৬ সালে ‘মালা’ ছবির জন্য লিও ফিল্মস প্রদত্ত সম্মাননা স্মারক, ১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্রের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক এবং সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পাবনা কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃক প্রদত্ত স্বর্ণপদক লাভ করেন ২০০৩ সালে।
রেবেকা ব্যক্তিজীবনে ১৯৫৫ সালে, খবির উদ্দিনের সংগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেত্রী-লেখিকা-চিত্রপরিচালক। তাঁর লেখা ৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে ।
রেবেকা রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থ মধ্যে- নদী বুঝি ডাকে, সময় ভেঙেছে সংশয়, বৃষ্টির ঠোঁটে অন্যতম। তিনি ঢাকায় শিল্পব্যাংক-এ কর্মরত ছিলেন।
যে সময়ে মেয়েদের ঘরের বাহিরে যাওয়ার বিধীনিষেধ মানতে হতো, বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদের। সেই সময়ে, সেই যুগে রেবেকা একজন মুসলিম নারী হয়েও, শুধু অভিনয়ই করেন-নি, চলচ্চিত্র নির্মাণও করেছেন। এ একজন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক নারীর পক্ষেই সম্ভব। বাংলাদেশের নারীদের চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ সুগম করে দিয়েছেন যে মহীয়সী নারী, আমাদের দেশের প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে, তাঁর নাম চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।