দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের আজ ৮৫তম জন্মদিন। তাঁকে শুভ জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। প্রার্থণা করি তাঁর সুস্থ-দীর্ঘ জীবনের।
বাংলাদেশের সাহিত্যের সৃজনশীল, কীর্তিমান লেখিকা, রাবেয়া খাতুন ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর, মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মেও নারীর অবরুদ্ধতার অবসান ঘটিয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে অল্প বয়সেই রাবেয়া খাতুন, লেখনীর সূচনা ঘটান, সাহিত্য-অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন নিজের অবস্থান। কর্মজীবনে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি সিনেমা, খাওয়াতীন ও অঙ্গনা পত্রিকায় নিরলস ভাবে সাংবাদিকতা করেছেন।
রাবেয়া খাতুনের প্রথম উপন্যাস ‘মধুমতি’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে। উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর উপন্যাস এবং স্মৃতিকথা মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক।
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে- ফেরারী সূর্য, বায়ান্ন গলির এক গলি, দিবস রজনী, নীল নিশিথ, জীবনের আর এক নাম, ই ভরা ভাঁদর মাহ ভাঁদর, মেঘের পরে মেঘ, একাত্তরের নয়মাস, বাগানের নাম মালনিছড়া, রমনা পার্কের পাঁচ বন্ধু, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, শঙ্খ সকাল অন্যতম। এছাড়াও তিনি প্রায় এক হাজারের উপর ছোটগল্প লিখেছেন।
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় রাবেয়া খাতুনের অবদান তাৎপর্যপূর্ণ। সাহিত্যকর্ম বিবেচনায় তিনি একদিকে গ্রামভিত্তিক মধ্যবিত্ত সমাজের রূপান্তরের রূপকার এবং অন্যদিকে নাগরিক মধ্যবিত্তের বিকাশ ও বিবর্তনের দ্রষ্টা। সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর নিজস্ব জীবনবোধ ও অন্তর্দৃষ্টিমূলক প্রতিভার সমন্বয়।
ছোটগল্প, ভ্রমণসাহিত্য, স্মৃতিকথামূলক রচনা, শিশুসাহিত্যে তাঁর স্বকীয়তা, বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ও গল্প রচনায় তাঁর অবদান বাংলা সাহিত্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস দুঃসাহসিক অভিযান, মেঘের পরে মেঘ, মধুমতি, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, মহাপ্রলয়ের পর অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মেঘের পরে মেঘ’ সব মহলে প্রসংশিত ও সমাদৃত হয়েছে।
রাবেয়া খাতুন দীর্ঘদিন যাবৎ শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থেকেছেন। বাংলা একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গঠনতন্ত্রের পরিচালনা পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরিবোর্ডের বিচারক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া তিনি শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিস ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ ও মহিলিা সমিতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থেকেছেন।
সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাবেয়া খাতুন ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ঋষিজ সাহিত্য পদক ও অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার এবং ১৯৯৯ -তে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
এছাড়া তিনি নাটকের জন্য ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে, টেনাশিনাস পুরস্কার এবং চলচ্চিত্রের জন্য ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার ও ২০১৭-তে স্বাধীনতা পুরস্কার’সহ বহু পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন