ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী কৌতুক অভিনয়ের জাদুকর দিলদার। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের হাসির খোরাক যুগিয়েছেন দারুণভাবে। চলচ্চিত্রের পর্দায় দর্শকদের দুঃখ ভুলানো মানুষ ছিলেন তিনি। ছবি দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনা বা ক্লান্তিতে মন যখন আচ্ছন্ন, ঠিক তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির ফোয়ারা নিয়ে। এককথায়, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দিলদারের তুলনা তিনি নিজেই। আজ এই অভিনেতার জন্মদিন।
১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দিলদার। তিনি এসএসসি পাস করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন। দিলদার চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৭২ সালে। তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেন এমন হয়’। এই ছবির মাধ্যমেই অভিনয়ে অভিষেক। ধীরে ধীরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতার আসন দখল করে নেন তিনি। পাঁচ শতাধিক সিনেমাতে অভিনয় করেছেন দিলদার।
দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘লড়াকু’ ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘শুধু তুমি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘অজান্তে’, ‘প্রিয়জন’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘নাচনেওয়ালী’, ‘ত্রাস’, ‘তেজী’,‘এই ঘর এই সংসার’ ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ‘খায়রুন সুন্দরী’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র দিলদারের কৌতুক অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে।
এক সময় যে ছবিতে দিলদার নেই তা ব্যবসাসফল না হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ত। তার জনপ্রিয়তা এতোটাই আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছিলো যে তাকে নায়ক করে নির্মাণ করা হয় ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। তার বিপরীতে অভিনেত্রী ছিলেন নূতন। ছবিটি ব্যবসাসফলও হয়। বিশেষকরে এর গানগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন দিলদার।
ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন সমৃদ্ধ এক মানুষ। দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম মাসুমা আক্তার। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ।
দিলদারহীন ১৮ বছর পার করছে বাংলা চলচ্চিত্র। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় এই কৌতুক অভিনেতা। তার মৃত্যুর পর ঢাকাই সিনেমাতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয় তা এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। দিলদার চলে গেলেও তার জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি। তিনি বাংলা ছবির ‘কমেডি কিং’ হিসেবেই চিরদিন কোটি দর্শকদের হৃদয়ে থাকবেন।