English

22 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

চীনে কেন বাজার হারাচ্ছে হলিউড সিনেমা

- Advertisements -

তিন দশক আগে আমেরিকান চলচ্চিত্র পা রেখেছিল গ্রেট ওয়ালের দেশে। শুরুর দিকে জনপ্রিয়তার কমতি ছিল না। কিন্তু এখন বদলে গেছে দৃশ্যপট। চীনের বাজারকে আগের মতো আর টানতে পারছে না হলিউড। কিছু দিন হলো বিষয়টি আমেরিকান গণমাধ্যম ও মার্কিন সিনেমা বোদ্ধাদের আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে।

১৯৯৪ সালে ‘দ্য ফিউজিটিভ’ সিনেমাটি চীনে আমদানি করা প্রথম আমেরিকান চলচ্চিত্র। চীনের দর্শকরা অবাক হয়েছিল সিনেমাটি দেখে। চীনা বাজারে হলিউডের সুসময়ের সূচনা করে ‘দ্য ফিউজিটিভ’।

পরবর্তী বছরগুলোয় দেখা গেল ‘ট্রু লাইজ’, ‘টাইটানিক’ এবং ‘ট্রান্সফরমারস’-এর মতো সিনেমাগুলো চীনের বক্স অফিসের অর্ধেকটা দখল করে ছিল। হলিউডের একটি সিনেমা সহজেই চীনা বক্স অফিসে আয় করছিল কয়েক মিলিয়ন, এমনকি বিলিয়ন ইউয়ানও। ২০১৯ সালে ‘অ্যাভেঞ্জার্স-৪’ চীনের বক্স অফিসে আয় করেছিল ৪২০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। চীনের বাজারে হলিউডি সিনেমার ওটা ছিল রেকর্ড আয়। এভাবেই চীন একটা পর্যায়ে পরিণত হয়েছিল হলিউডের বৃহত্তম বিদেশি বাজারে।

যাহোক, গত বছরের শুরু থেকেই হলিউডের ভ্রূ কুঁচকে আছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চলচ্চিত্র বাজার চীনে হলিউডের আয়ের সূচক নেমে গেল হু হু করে। ২০২৩ সালে চীনের বক্স অফিস তালিকার সেরা দশে হলিউডের একটি সিনেমাও জায়গা পেল না! মার্কিন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের বক্স অফিসে হলিউডি চলচ্চিত্রের শেয়ার ২০২৩ সালে প্রায় ১২ শতাংশে নেমে গেছে। ২০২৪ সাল থেকে চীনের বক্স অফিসের সেরা দশটির মধ্যে শুধু ‘গডজিলা বনাম কং ২: রাইজ অব অ্যান এম্পায়ার’ এখন আছে আট নম্বরে।

চীনের বাজারে হলিউডের ৩০ বছর আগের তুমুল সেই জনপ্রিয়তা এখন বস্তুত অদৃশ্য। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর বড় কারণ হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হলিউডে নতুনত্বের ঘাটতি। সেখানকার সিনেমাগুলো এখন দর্শকদের বিনোদনের চেয়ে বিরক্তিই বাড়াচ্ছে।

এনবিসি ফাইন্যান্সিয়াল চ্যানেল উল্লেখ করেছে, চীনা দর্শকরা স্টাইলাইজড হলিউডি ন্যারেশন দেখে দেখে ক্লান্ত। হলিউড ম্যাগাজিন ‘ভ্যারাইটি’ মনে করছে, চীনে হলিউড তার পুরনো জৌলুসে ফেরাতে পারছে না। পুরনো মুভির সিক্যুয়েল বা সুপারহিরো মুভিগুলো এখন আর চীনের বাজার কাঁপাতে পারছে না একটুও।

তবে হলিউড চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ কমে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ—চীনের স্থানীয় চলচ্চিত্র শিল্পের দ্রুত বিকাশ ও প্রতিযোগিতা।

আমরা বলতে পারি, ১৯৯৪ সালে ‘দ্য ফিউজিটিভ’ মুভির জনপ্রিয়তা দেখেই চীনা চলচ্চিত্র শিল্প নিজেদের আত্মনির্ভরশীলতা ও গুণমান বাড়াতে মনোযোগী হয়। ৩০ বছরের সাধনায় চীনা চলচ্চিত্র যেসব ক্ষেত্রে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়েছে সেসব শুধু চলচ্চিত্রের বিষয় বা নির্মাণশৈলীতেই আটকে থাকেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কার্টুন, অ্যাকশন, সাসপেন্স ও সায়েন্স ফিকশনসহ বিভিন্ন থিমযুক্ত মুভিও চীনে দারুণ জনপ্রিয় হচ্ছে।

একটি আমেরিকান ফিল্ম রিসার্চ ও কনসালটিং সংস্থার প্রধান ল্যান্স বো বলেছেন, এখনকার অনেক জনপ্রিয় চীনা চলচ্চিত্রের গল্প সাধারণ মানুষের জীবন থেকে নেওয়া। দর্শকদের হৃদয়কে যা সহজেই নাড়া দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, চীনে এখন যে অপরাধ বা সাসপেন্স বিষয়ক চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে সেগুলোয় আছে বুদ্ধিদীপ্ত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহ। দর্শকদের সিনেমা দেখার আগ্রহ বাড়াতে এ দুটোই কিন্তু মূল উদ্দীপক। বিপরীতে, হলিউডের অনেক সিনেমার ক্ষেত্রে এখন দেখা যাচ্ছে—শেষে কী ঘটবে তা আগেই আঁচ করা যাচ্ছে।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং চীনা চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ স্ট্যানলি রোজেন মনে করেন, বাণিজ্যের বিচারে চীনা ও হলিউডি চলচ্চিত্রের ব্যবধান দিন দিন কমছে। চীনের চলচ্চিত্র শিল্প প্রথমে হলিউডের কাছ থেকে শিখেছে, পরে বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হলিউডকে পরাজিতও করেছে।

ইউএস ‘ন্যাশনাল রিভিউ ম্যাগাজিন’ বলছে, চীনের চলচ্চিত্র শিল্প এখন তার অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। আবার আমেরিকান সাংস্কৃতিক বিষয়ক কলাম লেখক স্টিফেন কেন্ট বলেছেন, চীন সক্রিয়ভাবে তাদের সাংস্কৃতিক আখ্যানকে সিনেমা রূপ দিতে চায়, সিনেমার মাধ্যমে তাদের জনগণকে একত্রিতও করতে চায়।

অন্যদিকে, কিছু আমেরিকান মিডিয়া অবশ্য এখন ‘চোখে রঙিন চশমা’ লাগিয়ে চীনা সিনেমাকে ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘দেশপ্রেম’ পরিবেশনের দায়ে অভিযুক্ত করছে। তারা মূলত অসহায় বোধ করছে যে, হলিউড ক্রমবর্ধমানভাবে লাভজনক চীনা বাজার হারাচ্ছে। তাদের এটাও স্বীকার করতে হবে, চীন এখন উচ্চমানের চলচ্চিত্র তৈরি করছে যা দেশীয় দর্শকদের চাহিদা ও মনস্তত্ত্বটা বুঝতে পারে।

ভবিষ্যতে হলিউডের কাছে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি বাজার হিসেবে থেকে যাবে। কারণ চীনকে ছেড়ে দেওয়াটাও হবে হলিউডের জন্য কঠিন একটি কাজ। আর তাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে চাইলে নির্মাণ কৌশলে আরও সামঞ্জস্য আনতে হবে হলিউডকে। অবশ্য চীনা বাজারে হলিউডের পূর্বেকার ‘অনবদ্য’ সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনা আদতে বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন