আজাদ আবুল কাশেম: চিত্রপরিচালক-লেখক আজিজ মেহের-এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। প্রয়াত এই গুণি মানুষটির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
আজিজ মেহের ১৯৩২ সালের ১৪ নভেম্বর, বর্ধমানের কালনায়, জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জ। তাঁর বাবা মিজানুর রহমান ছিলেন পুলিশ অফিসার । বড় ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুখলেছুর রহমান, আরেক বড় ভাই খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক ইবনে মিজান। বড় বোন অধ্যাপিকা মুসলেমা খাতুন, ছোট বোন বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপিকা মকবুলা মঞ্জুর। মোট সাত ভাই-বোন ছিলেন তাঁরা।
আজিজ মেহের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। পরিবারের দেয়া নাম ছিল, এস এম মসিউর রহমান। ডাক নাম টুঙ্কু। রাজনৈতিক কারনে ছদ্মনাম নিয়েছিলেন, আজিজ মেহের। চলচ্চিত্রে এসেও এই নামই বহাল থাকে। কালক্রমে তাঁর আসল নামটিই হারিয়ে যায়। তাঁর সর্বত্র পরিচিতি ছিল আজিজ মেহের নামেই।
একসময় স্টিল ফটোগ্রাফিতে তাঁর খুব ভালো হাত ছিল। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এরপরে জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রের সাথে। এ জে কারদারের ‘দূর হ্যায় সুখ কা গাঁও’ ছবির ব্যবস্থাপনা সহকারী হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্রে আসেন আজিজ মেহের । ‘এই তো জীবন’ ছবির প্রযোজনা ব্যবস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। কাজ করেছেন চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সাথেও।
আজিজ মেহেরের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘আওর গম নেহী’ (যৌথভাবে ইবনে মিজানের সাথে), যদিও শেষ পর্যন্ত এছবিটি মুক্তিপায়নি। আবারও বড় ভাই ইবনে মিজানের সাথে যৌথভাবে পরিচালনা করেন ‘একালের রূপকথা’ ছবিটি, মুক্তিপায় ১৯৬৫ সালে। তিনিএককভাবে পরিচালনা করেন- ‘বিচার’ ও ‘আকাশ পরী’ নামের ছবি দুটি।
চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছেন, কাহিনী ও সংলাপ লিখেছেন। ধীরে বহে মেঘনা, রূপালী সৈকতে, পরিনীতা’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন আজিজ মেহের ।
কাহিনী ও সংলাপ লিখেছেন, ‘জংলী মেয়ে’ ও ‘পাতালপুরীর রাজকন্যা’ ছবির।
লেখক আজিজ মেহেরের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে আছে- স্মৃতি শুধু স্মৃতি নয়, নিষিদ্ধ কথকথা, আনন্দের ডায়েরী, ইনোনি শকুন্তলার ভালোবাসা, প্রভৃতি। ‘বস্তু প্রকাশন’ নামে তাঁর নিজের একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে অনেক বিশিষ্টজনের বই প্রকাশিত হয়েছে ।
লেখক-প্রকাশক, সাংবাদিক-চিত্রপরিচালক সর্বোপরি তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ছিলেন সাবেক নকশাল নেতা, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল, দেবেন শিকদার)-এর সাধারণ সম্পাদক। সারাজীবন অনেক কৃষক আন্দোলন করেছেন, মওলানা ভাষানীর সাথে কাগমারী সম্মেলন করেছেন, সন্তোষের মহাসমাবেশ করেছেন, পাকিস্তান আমলে বহুবার জেল খেটেছেন, সবশেষ কারাবরণ করেছিলেন জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসন আমলে।
বাম রাজনীতি চিন্তাচেতনার মানুষ হলেও তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক, প্রকাশক, চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী ও গুণী চলচ্চিত্রকার। ছিলেন ভালো সংগঠক, একজন সৎ নিষ্ঠাবান, সদালাপী সুন্দর মনের মানুষও ।
গুণীজন আজিজ মেহের অনন্তলোকে ভালো থাকুন এই আমাদের প্রার্থণা।