আজাদ আবুল কাশেম: চিত্রগ্রাহক-সাংবাদিক মিশুক মুনীর-এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট, মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২ বছর। প্রয়াত মিশুক মুনীরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
মিশুক মুনীর (আশফাক মুনীর চৌধুরী) ১৯৫৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী।
মিশুক মুনীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৯৭৯ সালে স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন।
পড়ালেখা শেষ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে, ভিডিও জার্নালিজম কোর্স-এর সূচনা করেন মিশুক মুনীর।
এক সসময় শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোদস্তুর সাংবাদিকতায় যুক্ত হন মিশুক মুনীর। ১৯৯৯ সালে, একুশে টেলিভিশনে হেড অফ নিউজ (অপারেশন) হিসেবে যোগ দেন। তিনিই আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক ধারার টেলিভিশন সাংবাদিকতার সূচনা করেন। তিনি ২০০১ সাল পর্যন্ত একুশে টিভির বার্তাপ্রধান (পরিচালনা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০২ সালে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখেন মিশুক মুনীর। কাজ করেন বিশ্বের নামকরা নির্মাতাদের সঙ্গে। আফগানিস্থানে চিত্রায়িত প্রামান্যচিত্র ‘রির্টান টু কান্দাহার’-এর প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ‘ওয়ার্ডস অব ফ্রিডম’সহ আরো কিছু প্রামান্যচিত্রেও কাজ করেছেন।
২০০৭ সালে কানাডীয় সাংবাদিক, পল জেয়োর সাথে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক সংবাদ টেলিভিশন-রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্ক। সেখানে দীর্ঘ দিন তিনি সম্প্রচার প্রধান ও পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন । টরন্টোর ‘ব্রেকথ্রো ফিল্মস’ ও ‘জে ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্স ক্যামেরাপারসন ও প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন।
মিশুক মুনীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিওগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।
দেশে ফিরে এসে ২০১০ সালে, তিনি এটিএন নিউজ-এ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন মিশুক মুনীর।
তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘রানওয়ে’ ছবির প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন মিশুক মুনীর। পরের ছবি কাগজের ফুল নির্মাণের কাজে গিয়েই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি ও তারেক মাসুদ।
খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক-সাংবাদিক মিশুক মুনীর ‘একাডেমি অব কানাডিয়ান সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন’-এর এবং ‘কানাডিয়ান ইনডিপেনডেন্ট ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য এবং ‘কানাডিয়ান সোসাইটি অব সিনেমাটোগ্রাফি’র সহযোগী সদস্য ছিলেন।
অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে এসেছিলেন সাংবাদিকতায়। বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতায় সংযোজন করেছিলেন এক ভিন্নমাত্রা। প্রতিভাবান মেধাবী এই মানুষটি, মাত্রই চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছিেলন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও ভিন্ন কিছু-ভালো কিছু কাজ আমরা পেতাম।