কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশিদের চাঁদে জমি কেনার হিড়িক পড়েছে। এবার চাঁদে জমি কিনলেন নাট্যনির্মাতা হিমু আকরাম। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেনিস হোপের ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ থেকে এক একর জমি কিনেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, চাঁদের নাগরিকত্বও পেয়েছেন।
চাঁদে কেনা এক একর জমির দলিল গত ২১ সেপ্টেম্বর, হাতে পেয়েছেন হিমু আকরাম। চাঁদের ম্যাপেও উল্লেখ রয়েছে তার জমির অবস্থান। নাগরিকত্বের পাসপোর্টও হাতে পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে হিমু আকরাম বলেন—‘এটা এক ধরনের ইলুয়েশন। কল্পনার রাজ্যে নিজের জমি! কখনো ভিখারির ডাকাত হওয়ার ইচ্ছে হতে পারে, তেমনি বামুন হয়েও চাঁদে হাত দেয়া যায়!’
এখন চাঁদ দেখলে হিমুর মনে হয় সেখানে তার এক টুকরো জমি আছে। এই অনুভূতি ব্যক্ত করে হিমু আকরাম বলেন—‘ফুল মুন দেখার জন্য বছরের পর বছর বহু জায়গায় গিয়েছি। পাহাড় থেকে সমুদ্রে, খোলা মাঠ থেকে বনে। এই জোছনার প্রেমে পড়েই চাঁদে জমি কিনেছি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকালে এখন মনে হয় সেখানে আমার এক টুকরো জমি আছে। হয়তো কয়েক হাজার বছর পর আমার জমিতে অন্য কারো ঘর হবে। হয়তো সেখানেও বৃষ্টি হবে, তারাও ভালোবাসবে!’
১৯৭৯ সালে চাঁদ এবং মহাশূন্যের অন্যান্য বস্তুতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ; যা ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। সেখানে মূল বিষয়গুলো ছিল, এসব কর্মকাণ্ড হতে হবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং কোনো মহাকাশ স্টেশন বানাতে হলে আগে জাতিসংঘকে জানাতে হবে। ওই চুক্তিতে আরো বলা হয়েছিল, চাঁদ এবং এর যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পত্তিতে মানব সভ্যতার সবার সমান অধিকার থাকবে। তবে সমস্যা হলো, মাত্র ১১টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়ার মতো মহাকাশ গবেষণার প্রধান দেশগুলো চুক্তিটি সমর্থন করেনি।
বলা হয়ে থাকে, চুক্তির ফাঁক কাজে লাগিয়ে চাঁদে জমি বিক্রি হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে চুক্তির একটি ফাঁক খুঁজে বের করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। চুক্তিতে লেখা ছিল, কোনো রাষ্ট্র চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না। কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে, কোনো সাধারণ মানুষ মালিকানা দাবি করতে পারবে না। ১৯৮০ সালে এই সুযোগটি প্রথম কাজে লাগান ডেনিস হোপ। আমেরিকান আইন অনু্যায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি মালিকবিহীন সম্পদের মালিকানা দাবি করে, অন্য কোনো ব্যক্তি সেই সম্পদে দাবি না রাখে এবং দলিলে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে তাহলে সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পদের মালিক হবে। হোপ চাঁদের মালিকানার ডকুমেন্ট তৈরি করে কৌশলে তা স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং নিয়ম অনুযায়ী চাঁদের মালিক হিসেবে জমি বিক্রি শুরু করেন। হোপের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘লুনার অ্যাম্বাসি কমিশন।’ এছাড়া ‘দ্য লুনার রেজিস্ট্রি’, ‘লুনার ল্যান্ড’সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চাঁদে জমি বিক্রির অফার দিচ্ছে।
জানা যায়, এ পর্যন্ত তারকা চাঁদে জমি কিনেছেন লুনার অ্যাম্বাসি থেকে। এ তালিকায় রয়েছেন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার, রোনাল্ড রিগান। এছাড়াও বলিউড তারকাদের মধ্যে রয়েছেন—শাহরুখ খান, প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত।