চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা আনোয়ার-এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৫ সালের ১২ মে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। প্রয়াত এই গুণী চিত্রপরিচালকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
মোস্তফা আনোয়ার ১৯৪১ সালের ১৯ নভেম্বর, জামালপুর জেলায়, জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেই তিনি পাকিস্তান এয়ার ফোর্স (পিএএফ)-এ যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। চাকরিকালীন অবসর সময়ে তিনি তাঁর সহকর্মীদের সাথে সিনেমা হলে ছবি দেখতে যেতেন। সেইসব ছবি দেখেই তাঁর চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মায়।
তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে চলে আসেন। প্রথমে অভিনয় করেন ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে। পরবর্তিতে জহির রায়হানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ফেরারী’, মুক্তিপায় ১৯৭৬ সালে। তাঁর পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের ধ্যমে রয়েছে- ‘কাজল লতা’, ‘আঁখি মিলন’, ‘পুষ্প মালা’, ‘সমর্পণ’, ‘আশ্রয়’, ‘অবুঝ হৃদয়’, ‘আপন ঘর’, ‘কাশেম মালার প্রেম’, ‘নাগিনী সাপিনী’, ‘অন্ধ প্রেম’, ‘বাংলার মা’, ‘হাসি’, ‘কান্দ কেন মন’, ‘মায়ের কসম’, ‘হৃদয় নিয়ে যুদ্ধ’, ‘ফাঁসি’ প্রভৃতি।
ভালো ছবি নির্মাণের পাশাপাশি তাঁর ছবিতে ব্যবহৃত হতো বেশ ভালো শ্রুতিমধুর গান। মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো যেমন জনপ্রিয় হয়েছে, তেমনই তাঁর চলচ্চিত্রের গানগুলো পেয়েছে জনপ্রিয়তা।
তাঁর চলচ্চিত্রগুলোতে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান, যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফিরে- ‘আমার গরুর গাড়িতে বাউ সাজিয়ে’ (ছবি-আঁখি মিলন), ওই রাত ডাকে ওই চাঁদ ডাকে আজ তোমায় আমায়’ (ছবি-কাজল লতা), ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’ (ছবি-আবুঝ হৃদয়), ‘যদি নিন্দার কাঁটা না বিধিল বুকে’ (ছবি-অন্ধ প্রেম)।
একজন প্রতিভাবান মেধাবী চিত্রপরিচালক ছিলেন মোস্তফা আনোয়ার। জনপ্রিয় সামাজিক ছবি’র বাণিজ্যসফল নির্মাতা হিসেবে তিনি এক সময় বেশ পরিচিত ছিলেন। তাঁর নির্মিত অনেক চলচ্চিত্রই দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসা সফল হয়েছে। তিনিও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, হয়েছেন প্রশংসিত।
চলচ্চিত্রের প্রতি অদম্য ভালোবাসার কারণে, ভালো মানের সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আসেন মোস্তফা আনোয়ার। মেধায়-মননে একজন গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠত করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখেন।
কিন্তু অনেকেই মনে করেন, আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প মেধাবী ও অত্যান্ত গুণী এই মানুষটিকে এতটুকুও মূল্যায়ন করেননি।তাঁর প্রতিভা ও সৃষ্টিকর্মের স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা।
যে কারনে হয়তো তিনি বহু বছর ধরে নিরবে-নিভৃতে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। এক সময় নিরবে-নিভৃতে সবার অজান্তেই চলে গেলেন এই পৃথিবী থেকে।
মোস্তফা আনোয়ার, খুবই নিরিহ-বিনয়ী-ভদ্র ও একজন অত্যন্ত ভাল মনের মানুষ হিসেবে সমাদৃত ছিলেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মানুষদের কাছে । তিনি শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও, তাঁর মূল্যবান সৃষ্টিকর্মের মধ্যদিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন যুগের পরে যুগধরে।