চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক মহম্মদ হান্নান-এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারী রাতে, ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে, লঞ্চে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। প্রয়াত চিত্রপরিচালক মহম্মদ হান্নান-এর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মহম্মদ হান্নান ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর, বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
চলচ্চিত্র সম্পাদক এনামুল হক-এর সহকারী হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্রে আগমন তাঁর। পরবর্তিতে চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক বেবী ইসলামের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি । তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘রাই বিনোদিনী’ মুক্তি পায় ১৯৮৫ সালে । মহম্মদ হান্নান পরিচালিত অন্যান্য ছবি, ‘মালা বদল’, ‘মাইয়ার নাম ময়না’,
‘অবরোধ’, ‘বিচ্ছেদ’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, বিদ্রোহ চারিদিকে’, সাবধান’, ‘খবরদার’, ‘দলপতি’, ‘পড়েনা চোখের পলক’, ‘সাহসী মানুষ চাই’, ‘নয়ন ভরা জল’, ‘জীবন এক সংঘর্ষ’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘টিপ টিপ বৃষ্টি’, ‘শিখন্ডী কথা’, প্রভৃতি।
মহম্মদ হান্নান চলচ্চিত্রের কাহিনী-চিত্রনাট্যও লিখেছেন। বেবী ইসলাম পরিচালিত ‘চরিত্রহীন’ ছবির কাহিনী লিখেন তিনি। এছাড়া নিজের পরিচালিত- বিক্ষোভ, ভালবাসা ভালবাসা, টিপ টিপ বৃষ্টি, শিখন্ডী কথা, এসব ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছেন। এছাড়া তিনি একজন কবিও।
তিনি কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। একজন প্রযোজকও ছিলেন তিনি। তাঁর প্রযোজনা সংস্থার নাম- মাস্ মিডিয়া লিমিটেড। মহম্মদ হান্নান টেলিভিশনের জন্যে অনেক নাটক বানিয়েছেন।
মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘সাহসী মানুষ চাই’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনটি শাখায় পুরস্কার লাভ করে।
‘বিদ্রোহ চারিদিকে’ চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘শিখন্ডী কথা’র জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পান।
মহম্মদ হান্নান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির, একাধিকবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেছেন এবং একবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
একজন জনপ্রিয় ও ব্যববসাসফল চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে, মহম্মদ হান্নান ছিলেন বেশ খ্যাতিমান। অনেকগুলো সুপার-ডুপার হিট চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণ করেছেন। তিনি বেশীরভাগ ছবিই নির্মাণ করেছেন বক্তব্যধর্মী কাহিনী নিয়ে। তাঁর নির্মিত প্রায় চলচ্চিত্রেই থাকতো দেশাত্মবোধ ও সমাজ জাগরণের গল্প।
পড়ে না চোখের পলক কি তোমার রূপের ঝলক…., একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল…, বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়…, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন…,
যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়…, মোরা নিরন্ন বড় ক্ষুধার্ত নেই কষ্টের কোন শেষ…,
তোমাকে ভুলতে গিয়ে বার বার মনে পড়ে যায়…,
জীবন ফুরিয়ে যাবে ভালোবাসা ফুরাবে না জীবনে…,
এসো ভালোবাসি দেশকে দেশের মানুষকে…,
তোমায় গড়েছে বিধাতা চন্দ্র তারার মাটি দিয়ে…,। এ ধরণের জনপ্রিয় শ্রুতিমধুর গানগুলো আছে মহম্মদ হান্নান পরিচালিত চলচ্চিত্রে।
বাংলসদেশের চলচ্চিত্রে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মহম্মদ হান্নান।