English

29 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার ওবায়েদ-উল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: ওবায়েদ-উল হক, দেশবরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও নাট্যকার। মেধাবী, সৃজনশীল, বহুমাত্রিক প্রতিভাবান একজন শ্রদ্ধেয় গুণি মানুষ ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় অনন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। এই কৃতিমান মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি আজ থেকে ১৫ বছর আগে, ২০০৭ সালের ১৩ অক্টোবর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। প্রয়াত এই বরেণ্য মানুষটির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ওবায়েদ-উল হক ১৯১১ সালের ৩১ অক্টোবর, ফেনী জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা খান বাহাদুর মোঃ বজলুল হক, ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী। মায়ের নাম আঞ্জুমান নেসা। ওবায়েদ-উল হক ১৯৩৪ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও মনোবিজ্ঞানে এম.এ পাস করেন। ১৯৩৬ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৩৮ সালে সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন ওবায়েদ-উল হক। ১৯৪৫ সালে সরকারী চাকুরী ছেড়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ‘হিমাদ্রী চৌধুরী’ ছদ্ম নামে। কলকাতায় তিনি প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ১৯৪৬ সালে, চলচ্চিত্রের নাম ‘দুঃখে যাঁদের জীবন গড়া’ । ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন।

১৯৫৭ সালে ঢাকায় এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ওবায়েদ-উল হক এর কাহিনী নিয়ে, সাংবাদিক ফজলুল হক ‘আযান’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন (এই ছবিটি পরবর্তীতে ‘উওরণ’ নামে ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায়)।

ওবায়েদ-উল হক ১৯৬৪ সালে নির্মাণ করেন ‘দুই দিগন্ত’ চলচ্চিত্রটি। এই ছবির কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য তাঁর নিজের। এছাড়াও ‘অন্তরঙ্গ’ ছবির কাহিনীকার ও গীতিকার তিনি।

ঢাকার ডেইলি পাকিস্তান অবজারভার-এ চলচ্চিত্র বিষয়ে ইংরেজী এবং বাংলা ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ এবং নিবন্ধ রচনা করেন ওবায়েদ-উল হক, যা এদেশের চিত্রশিল্পের উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

১৯৫১ সালে তিনি অবজারভার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই পত্রিকার তিনি উপসম্পাদক (১৯৫৮-১৯৬২), যুগ্মসম্পাদক (১৯৬২-১৯৭১) এবং স্বাধীনতাত্তোর পর্বে এ পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে এ পত্রিকার নামকরণ হয় প্রথমে- ‘দি অবজারভার’ পরে ‘দি বাংলাদেশ অবজারভার’। ১৯৮৬ সালে ‘ডেইলি নিউজ’-এর সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন ওবায়েদ-উল হক। একসময় তিনি দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ টাইমস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ওবায়েদ-উল হক রচিত নাটক—এই পার্কে, দিগ্বিজয়ী চোরাবাজার, ব্যতিক্রম, রুগ্না পৃথিবী, যুগসন্ধি ও সমাচার এই । কাব্যগ্রন্থ—দ্বিধার ফসল, সায়াহ্নের সংলাপ, গরীব হতে চাই ও পথের পদাবলী । উপন্যাস—সংগ্রাম, দ্বৈত সঙ্গীত ও ঢল, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর ইংরেজি গ্রন্থ Voice of Thunder শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত। পরে এটি A Leader with a Difference নামে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়।

চলচ্চিত্র, সাংবাদিকতা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ওবায়েদ-উল হক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনিসেফ পুরস্কার, কাজী মাহাবুবউল্লাহ ও জেবুন্নেসা স্ট্রাস্ট্র স্বর্নপদক, জহুর হোসেন চৌধুরী স্বর্ণপদক, মানিক মিয়া স্বর্ণপদক, আব্দুস সালাম স্বর্নপদক, অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার, মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড, হীরালাল সেন সম্মাননা, ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’সহ পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।

ওবায়েদ-উল হক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-এর প্রথম সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট গঠন কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (১৯৭৬) স্থাপিত হলে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এডিটরস কাউন্সিলেরও চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি এবং এর প্রতিনিধি হিসেবে তিন দফায় প্রেস কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সদস্য ছিলেন।

এ ছাড়াও ওবায়েদ-উল হক বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ (বিএসপি)-এর সভাপতি, প্রেস কমিশনের সদস্য এবং জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯৫ সালে, চলচ্চিত্রের শতবর্ষ উপলক্ষে গঠিত কমিটির তিনি ছিলেন চেয়ারম্যান। তিনি পি আই বি’র চেয়ারম্যান এবং নজরুল ইন্সটিটিউটেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।

ওবায়েদ-উল হক একাধারে একজন লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, নাট্যকার এবং দীর্ঘকাল ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ অবজার্ভার-এর সম্পাদক-এর দায়িত্ব পালন করেছেন। মেধাবী, সৃজনশীল, বহুমাত্রিক প্রতিভাবান একজন শ্রদ্ধেয় গুণি মানুষ ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় অনন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন, এই কৃতিমান মানুষটি ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মহিরূহ ব্যক্তিত্ব, শ্রদ্ধেয় ওবায়েদ-উল হক সাহেব অনন্তলোকে ভালো থাকুন, এই আমাদের প্রার্থণা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন