করোনার পর বাংলা চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর বছর ছিল ২০২২। চলতি বছর ১২ মাসে দেশের প্রেক্ষাগৃহে পেয়েছে অর্ধশত সিনেমা।
মার্চে মোশাররফ করিম, পরীমণি ও জিয়াউল রোশান অভিনীত ‘মুখোশ’ খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। একই মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শিমু’, ‘লকডাউন লাভ স্টোরি’, ‘জাল ছেঁড়ার সময়’, ‘তোর মাঝেই আমার প্রেম’ সিনেমাগুলোর কোনো আওয়াজে ছিল না।
রোজার কারণে এপ্রিলে কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। তবে মে মাসে রোজার ঈদে দর্শক জোয়ার শুরু হয়েছিল। ঈদে সিয়াম, পূজা, তাসকিন অভিনীত ‘শান’, শাকিব খান, শবনম বুবলী ও নবাগতা মৃদুলা অভিনীত ‘বিদ্রোহী’, শাকিব খান, পূজা চেরী অভিনীত ‘গলুই’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ। ‘বড্ড ভালোবাসি’ ও ‘পাপ পুণ্য’ নামে আরো দুটি সিনেমা রোজার ঈদে মুক্তি পেলেও আলোচনায় ছিল না। তবে ‘পাপ পুণ্য’ দর্শকমহলে প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি এ সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম ও শাহনাজ সুমির অভিনয় প্রশংসিত হয়।
জুন মাসে ‘আগামীকাল’, ‘বিক্ষোভ’, ‘তালাশ’ ও ‘অমানুষ’ নামে চারটি সিনেমা মুক্তি পায়। জুলাই মাসে ‘কার্ণিশ’ ও ‘যা হারিয়ে যায়’ নামে দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। তবে সিনেমাগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না।
একই মাসে কুরবানির ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অনন্ত ও বর্ষা অভিনীত ‘দিন : দ্য ডে’ এবং বিদ্যা সিনহা মিম, শরীফুল রাজ ও ইয়াশ রোহান অভিনীত ‘পরাণ’ সিনেমা নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। সিনেমাগুলোর মাধ্যমে দর্শক জোয়ার আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে এরমধ্যে সবচেয়ে ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি তুমুল প্রশংসিত হয় ‘পরাণ’। চলতি বছরের অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমাও এটি।
একই সময় পূজা চেরী ও রোশান অভিনীত ‘সাইকো’ নামের একটি সিনেমা মুক্তি পেলেও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। ঈদ পরবর্তী চঞ্চল চৌধুরী, শরীফুল রাজ ও নাজিফা তুষি অভিনীত ‘হাওয়া’ রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে। বিশেষ করে চলতি বছরে ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’র জোয়ারে চাঙ্গা হয়ে উঠে ঢাকাই সিনেমা। ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’র সাফল্যে আশায় বুক বাঁধেন পরিচালক প্রযোজকরা।
আগস্ট মাসে মাহিয়া মাহি ও রোশান অভিনীত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমা। দর্শক না থাকলেও এ সিনেমার প্রযোজকের সঙ্গে নায়িকার বিবাদের কারণে সমালোচনা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সিনেমা মুক্তি পায় ছয়টি সিনেমায়। এর মধ্যে রয়েছে রাসেলের ‘ভাইয়ারে’, সাইমন সাদিক ও মাহিয়া মাহী অভিনীত ‘লাইভ’, ইমন, নিপুণ ও সালওয়া অভিনীত ‘বীরত্ব’ এবং অপু বিশ্বাস ও ডিএ তায়েব অভিনীত ‘ঈশা খাঁ’। এর একটিও সাফল্য পায়নি।
একই মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক প্রচার পাওয়া জয়া আহসান, ফেরদৌস, তৌকীর আহমেদ অভিনীত ‘বিউটি সার্কাস’। তারকাবহুল সিনেমাটিও দর্শক টানতে পারেনি। তবে সিয়াম, নুসরাত ফারিয়া ও রোশান অভিনীত ‘অপারেশর সুন্দরবন’ সিনেমাটি ছিল আলোচনায়।
অক্টোবর মাসে মুক্তি পায় আদর আজাদ ও মাহিয়া মাহির ‘যাও পাখি বলো তারে’, পূজা চেরী ও এবিএম সুমন অভিনীত ‘হৃদিতা’, আবির চৌধুরী, আঁচল ও মৌমিতা মৌ অভিনীত ‘রাগী’, শিপন মিত্র, সুবাহ ও ওমর সানী অভিনীত ‘বসন্ত বিকেল’, সিয়াম, বিদ্যা সিনহা মিম ও শরীফুল রাজ অভিনীত ‘দামাল’ এবং ‘রোহিঙ্গা’ ও ‘জীবন পাখি’। এরমধ্যে শুধু ‘দামাল’ নিয়ে কিছুটা আলোচনা হয়েছে। তবে একটি সিনেমাও সেভাবে সাফল্য পায়নি।
নভেম্বরে মুক্তি পায় ‘কুড়া পক্ষির শূন্যে উড়া’, মৌসুমী অভিনীত ‘দেশান্তর’ ও ‘ভাঙন’, পার্থ বড়ুয়া ও অপর্ণা ঘোষ অভিনীত ‘মেড ইন চিটাগাং’ এবং ‘ও মাই লাভ’ নামের সিনেমাগুলো। এর মধ্যে ‘কুড়া পক্ষির শূন্যে উড়া’ কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার পায়।
ডিসেম্বরে মুক্তি পায় সর্বাধিক ৮টি সিনেমা। এর মধ্যে লুৎফর রহমান জর্জ ও মৌসুমী হামিদ অভিনীত ‘হাডসনের বন্দুক’, বাপ্পি চৌধুরী ও নবাগতা জাহারা মিতু অভিনীত ‘জয় বাংলা’, ‘৭১-এর একখণ্ড ইতিহাস’, তেলুগু সিনেমায় অভিনয় করা মেঘলা মুক্তা অভিনীত ‘পায়ের ছাপ’ এবং ইমন ও আইরিন অভিনীত ‘কাগজ’। সবকটি সিনেমা দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে।
বছর শেষ সপ্তাহে ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পায় দুটি সিনেমা। এগুলো হচ্ছে-শাহেদ শরীফ খান ও শিরীন শিলা অভিনীত ‘বীরাঙ্গনা ৭১’, কিশোর সিনেমা ‘মেঘ রোদ্দুর খেলা’। সিনেমা দুটি নিয়েও নেই তেমন সাড়া শব্দ।
বেশিরভাগ সিনেমার লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত না থাকলেও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার দুই বছরের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ২০২২ সাল! পাশাপাশি বিগত বেশ কয়েক বছরের চেয়ে এবার কিছুটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখকর ছিল।