আজাদ আবুল কাশেম: মঞ্জুর হোসেন। অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালক। প্রতিভাবান এই অভিনেতা বেশীরভাগ ছবিতেই খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে ভালো মানুষের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন কিছু কিছু চলচ্চিত্রে। সব ধরণের চরিত্রেই তিনি সফল ছিলেন। অভিনয় গুণে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তেমনই প্রসংশিতও হয়েছেন। এই গুণী অভিনেতা অভিনয় করতে গিয়ে তিনি তাঁর একটা পা হারিয়েছেন।
‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে ‘গোলাম হোসেন’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আজও কিংবদন্তী হয়ে আছেন।
একজন ভালো অভিনেতা, একজন ভালো মানুষ মঞ্জুর হোসেন, অভিনয়ের পাশাপাশি দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছেন। চলচ্চিত্রের এই গুণী মানুষটির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মঞ্জুর হোসেন ১৯৩৭ সালে, নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন মঞ্জুর হোসেন। তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- হারানো দিন, সুতরাং, রাজা সন্ন্যাসী, সখিনা, তাল বেতাল, পয়সে, ধারাপাত, সাত রং, তালাশ, বাহানা, শীত বিকেল, বন্ধন, মিলন, কাজল, ডাকবাবু, পরোয়ানা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, কাঞ্চন মালা, ছোট সাহেব, বাহানা, রূপবান, চাওয়া পাওয়া, নয়ন তারা, কাঞ্চনমালা, তুম মেরে হো, কুলি, মধুমালা, মুক্তি, সংসার, আলোমতি, যোগবিয়োগ, ভানুমতী, ছন্দ হারিয়ে গেলো, বাবলু, বর্গী এলো দেশে, ওরা ১১ জন, একই অঙ্গে এতো রূপ, প্রিয় বান্ধবী, নকল মানুষ, নোলক, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, বন্দিনী, মায়ার বাঁধন, অমর প্রেম, বধূ বিদায়, বিজয়িনী সোনাভান, আরাধনা, বারুদ, বানজারান, এতিম, বৌরাণী, আরাধনা, চন্দ্রলেখা, অাওয়ারা, কথা দিলাম, শাহজাদী গুলবাহার, নতুন পৃথিবী, ছোট বউ, স্বামীর ঘর, সন্ধি, সারেন্ডার, সাজা, শতর্ক শয়তান, চোরের বউ, প্রভৃতি।
মঞ্জুর হোসেন অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছেন। তাঁর প্রযোজিত ও পরিচালিত দুটি সিনেমা হচ্ছে ‘সমাপ্তি’ ও ‘দুটি মন দুটি আশা’।
গুনী অভিনেতা মঞ্জুর হোসেন বেতার ও টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন। বহু টেলিভিশন নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশেষ করে ‘ঢাকায় থাকি’ নাটকে তিনি একটা মজাদার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। এ নাটকে তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় মজার মজার সব সংলাপ বলতেন, যা অনেক দর্শকের মনে এখনও দাগ কেটে আছে। তাঁর মুখে বলা, ‘মাহমুদ সাহাব’ কথাটা তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ‘মাহমুদ’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তখনকার সময়ের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা ডাব্লু আনোয়ার (আলী রাজ)।
এই গুণী অভিনেতা মঞ্জুর হোসেন, অভিনয় করতে গিয়ে তিনি তাঁর একটা পা হারিয়ে ছিলেন । ১৯৭০ সালে ‘যোগবিয়োগ’ ছবির শ্যুটিং করতে গিয়ে, অসাবধানতাবসত নায়ক রাজ্জাকের ছুরিকাঘাতে তাঁর একটা পা অাহত হলে, পরে সেটা কেটে ফেলে দিতে হয়েছিল।
প্রতিভাবান এই অভিনেতা বেশীরভাগ ছবিতেই খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে কিছু কিছু ছবিতে ভালো মানুষের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন এবং প্রসংশিত হয়েছেন, জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে ‘গোলাম হোসেন’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আজও কিংবদন্তী হয়ে আছেন।
চলচ্চিত্রের লোকদের কাছে, ভালো মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকের দুঃসময়ে তিনি পাশে থেকেছেন, সহযোগিতার হাত বারিয়ে দিয়েছেন।
একজন ভালো অভিনেতা, একজন ভালো মানুষ হিসেবে মঞ্জুর হোসেন- চির অম্লান হয়ে থাকবেন।