আজাদ আবুল কাশেম: চলচ্চিত্রসংসদ আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ মুহম্মদ খসরু’র তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। প্রয়াত মুহম্মদ খসরু’র স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রসংসদ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মুহম্মদ খসরু ১৯৪৬ সালে, ভারতের হুগলী জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি কেরানীগঞ্জ উপজেলার, রুহিতপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। তাঁর পিতা হুগলী জুট মিলে কর্মরত ছিলেন। ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর ১৯৫০-এর দশকে তাঁরা স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) নকশা কেন্দ্রে আলোকচিত্রী হিসেবে প্রথমে কর্মজীবন শুরু করেন মুহম্মদ খসরু। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। ১৯৬৮ থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘ধ্রুপদি’ সম্পাদনা করা শুরু করেন তিনি।
এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক আরও একটি পত্রিকা ‘চলচ্চিত্র’ সম্পাদনা করেছেন। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ ও জাতীয় ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষক হিসাবেও কাজ করেছেন। বাংলাদেশে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ শুরু করার পেছেনেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত, রাজেন তরফদার পরিচালিত ‘পালঙ্ক’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন মুহম্মদ খসরু।
তিনি ১৯৭০-এর দশকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তাঁর ‘ধ্রুপদি’ পত্রিকাতে প্রকাশ করেছিলেন, যা সে সময় বেশ আলোচিত হয়েছিল এবং পরবর্তিতে উপমহাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তা পূণ:র্মুদ্রণ হয়।
মুহম্মদ খসরু’র লেখা প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ- ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন’, ‘বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ভূমিকা’, ‘সাক্ষাৎকার চতুষ্টয়’ প্রভৃতি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক যেসব সম্মাননা পেয়েছেন-
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে দীর্ঘ ৫০ বছর নিরবচ্ছিন্ন অবদানের জন্য হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আজীবন সম্মাননা-২০১৭।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পথিকৃৎদের অন্যতম একজন তিনি। যাঁদের উদ্যোগে, ত্যাগে এ দেশে চলচ্চিত্রসংসদ আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, বিকশিত হয়েছে, তিনি ছিলেন তাঁদেরই অন্যতম জন।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর অবদান অনিস্বীকার্য।
চলচ্চিত্রসংসদ কর্মী, গবেষক-লেখক, সর্বপোরি চলচ্চিত্রপাগল মানুষ, মুহম্মদ খসরু। আমরা তাঁকে রাখিব স্মরণে- হৃদয়ের গহীনে।