English

17 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

গোলাম মুস্তাফা : বাংলাদেশের একজন নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতিকর্মী, কিংবদন্তি সব্যসাচী শিল্পী

- Advertisements -

দেশবরেণ্য কিংবদন্তী অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা’র ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের এই গুণি অভিনেতার প্রতি ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

গোলাম মুস্তাফা ১৯৩৪ সালের ০২ মার্চ, পিরোজপুর জেলার দপদপিয়া গ্রামে, জন্মগ্রহন করেন । তাঁর বাবা ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার। স্কুল জীবন শুরু হয় ‘পিরোজপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে’। মাধ্যমিক পাস করেন ‘খুলনা জিলা স্কুল’ থেকে। স্কুল-কলেজ জীবনে নাটকে অভিনয় করা তাঁর শখ ছিল। ১৯৪৫ সালে বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল মঞ্চে বি.ডি হাবিবুল্লাহ রচিত ‘পল্লীমঙ্গল’ নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর বরিশাল জেলা স্কুলে ‘ফাতেহা ইয়াজ দাহাম’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ঐ নাম’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং আবৃত্তিকার হিসেবে তিনি দর্শকদের নজর কাড়েন।

পঞ্চাশের দশকের মধ্যসময়ে ঢাকায় আসেন এবং মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন গোলাম মুস্তাফা।
তিনি প্রথমে চিত্রজগতে আসেন প্রামাণ্যচিত্র ‘এক একর জমি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে। প্রথম অভিনীত ছবি এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’। ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে তিনি ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। মূলতঃ প্রথম ছবি থেকেই তিনি অভিনয়ে পারদর্শিতা দেখান।
এরপরে নায়ক, সহনায়ক, খলনায়কসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
গোলাম মুস্তাফা বাংলা ও উর্দু মিলে প্রায় তিনশতাধীক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হচ্ছে- হারানো দিন, চান্দা, নাচঘর, পীরিত না জানে রীত, কাজল, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, তালাশ, আলিবাবা চল্লিশ চোর, বন্ধন, বেগানা, কারওয়াঁ, ক্যায়সে কহু, নদী ও নারী, কার বউ, ইস্ ধরতি পর, ইন্ধন, চাওয়া পাওয়া, দাসী, সোহানা সফর, নতুন দিগন্ত, গোরী, ভাইয়া, প্রতিকার, দুই রাজকুমার, বলাকা মন, বিনিময়, সন্তান, নিজেরে হারিয়ে খুঁজি, রং বদলায়, সোনার খেলনা, কে আসল কে নকল, মিশর কুমারী, রক্তাক্ত বাংলা, তিতাস একটি নদীর নাম, সূর্যসংগ্রাম, ধীরে বহে মেঘনা, শ্লোগান, সীমানা পেরিয়ে, সারেং বৌ, পদ্মা নদীর মাঝি, মমতা, পিঞ্জর, বন্দিনী, আলোর পথে, দম মারো দম, ফকির মজনু শাহ, রূপালী সৈকতে, কার পাপে, ছোট মা, ঈমান, সখি তুমি কার, লুটেরা, মোকাবেলা, রাজনন্দিনী, জংলীরাণী, গাংচিল, অভিযোগ, আনারকলি, স্বামী, কলমীলতা, আকাশ পরি, টক্কর, লালু ভুলু, প্রাণ সজনী, নাজমা, জালিম, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, ঘুড্ডি, দেবদাস, শক্তি, চন্দ্রনাথ, সুখ দুখের সাথী, লক্ষ্মীবধূ, হিসাব নিকাশ, শুভদা, দোষী, অন্যায়, সুরুজ মিঞা, অবিচার, ব্যথার দান, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, স্ত্রী, আশা ভালোবাসা, জীবন সংসার, শ্রাবণ মেঘের দিন, ইত্যাদি।

গোলাম মুস্তাফা, ঢাকা টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নাটকে অভিনয় শুরু করেন। প্রথমদিকে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নাটকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
টেলিভিশন নাটকেও তিনি ছিলেন দাপুটে অভিনেতা। টেলিভিশনের অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেছেন, মডেল হিসেবেও ছিলেন জনপ্রিয়।
টেলিভিশনে তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক- অর্পিতা, নয়ন জোড়ের জমিদার, গুপ্তধন, হিতঙ্কর, পাথরে ফোটাব ফুল, অস্তরাগে, যুবরাজ, বেলা শেষে, পঞ্চমী, পিতাপুত্রের গল্প, শিল্পী, মাতৃকোষে, শুধু তোমার জন্য, ইত্যাদি।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গোলাম মুস্তাফা পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১৯৮০ সালে ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য, শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা, ১৯৮৬-তে ‘শুভদা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে এবং ১৯৮৯ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
অভিনয়শিল্পে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে তিনি ‘একুশে পদক’-এ ভুষিত হন। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।

ব্যাক্তিজীবনে গোলাম মুস্তাফা ১৯৫৮ সালে, তাঁর সহকর্মী অভিনেত্রী হোসনে আরার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। জামাতা হুমায়ুন ফরিদীও ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা।

গোলাম মুস্তাফা বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার-লেখক। বিভিন্ন সাময়িকীতে আধুনিক চলচ্চিত্র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি কর্নেল মেইগস রচিত ‘ফেয়ার উইন্ড টু ভার্জিনিয়া’ গ্রন্থের সুপাঠ্য অনুবাদ করেন। ইউসিস ঢাকা প্রকাশিত এ অনুবাদ গ্রন্থটির বাংলা নাম ‘নতুন যুগের ভোরে’। তাঁর অনেক অনুবাদকর্ম বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

একজন নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতিকর্মী, বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি সব্যসাচী শিল্পী গোলাম মুস্তাফা, অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সিনেমা ও নাটক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সুঅভিনয়ে, প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন, জনপ্রিয়তার সু-উচ্চ শিখড়ে।

জননন্দিত সুঅভিনেতা, শিল্প-সংস্কৃতির কৃতিমান ব্যক্তিত্ব গোলাম মুস্তাফা, শারীরিকভাবে চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর কর্ম ও জীবন। তাঁর চিন্তা-চেতনা, তাঁর আদর্শ।
চলচ্চিত্রের তথা শিল্প-সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্টরা যতবেশী গোলাম মুস্তাফা’র মতো কৃতিমানদের অনুসরণ করবেন, ততবেশী সমৃদ্ধ হবে আমাদের চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন