আজাদ আবুল কাশেম: ব্ল্যাক আনোয়ার অভিনেতা। বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, কখনো কৌতুক কখনো চরিত্রাভিনেতা, সব ধরণের অভিনয়েই ছিলেন সমান পারদর্শি। তবে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি অনেক ছবিতে গুরত্বপূর্ণ সিরিয়াস চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এবং পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
গুণি অভিনেতা ব্ল্যাক আনোয়ার-এর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ব্ল্যাক আনোয়ার (আনোয়ার হোসেন) ১৯৪১ সালের ১০ জুলাই, ঢাকার সুত্রাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাসস্থান নারায়নগঞ্জ জেলার, বন্দর উপজেলায়। তাঁর বাবা সোনা মিয়া ছিলেন, আমাদের দেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর একজন অভিনয়শিল্পী। অভিনেত্রী রেহানা জলি তাঁর ছোট বোন।
ব্ল্যাক আনোয়ারের রক্তে প্রবাহিত ছিল অভিনয়ের নেশা। স্কুল জীবনেই তিনি নাটকের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তখনকার সময়ে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতি করতেন ও মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। সেই সময়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল তাঁর অবাধ পদচারণা।
ব্ল্যাক আনোয়ার মূলত মঞ্চ থেকেই চলচ্চিত্রে আসেন। তাঁর পিতার চলচ্চিত্রে জড়িত থাকার সুবাদে, চলচ্চিত্র জগতের অনেকের সাথেই ছিল তাঁর পরিচয়।
নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত, ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর তিনি বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- সুয়োরাণী দুয়োরাণী, রং বদলায়, টাকা আনা পাই, জীবন থেকে নেয়া, অবুঝ মন, শ্লোগান, রংবাজ, ভুল যখন ভাঙল, দুই পর্ব, আপনজন, হাসি কান্না, প্রতিনিধি, অনন্ত প্রেম, স্বাক্ষী, অশান্ত ঢেউ, দেনা-পাওনা, জননী, সোনার হরিণ, হারানো মানিক, আরাধনা, কথা দিলাম, রাজা সাহেব, আশার আলো, রজনীগন্ধা, সিকান্দার, সাক্ষী, সৎভাই, রঙ্গীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, ব্যাথার দান, আরশী নগর, নেমক হারাম, আঘাত, জীবনধারা, প্রতিশোধের আগুন, লক্ষ্মীর সংসার, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, গরীবের বউ, খুনের বদলা, কাবুলিওয়ালা, প্রভৃতি।
ব্ল্যাক আনোয়ার বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন- কখনো কৌতুক অভিনেতা, কখনো চরিত্রাভিনেতা, সব ধরণের অভিনয়েই ছিলেন সমান পারদর্শি। তবে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেলেও তিনি অনেক ছবিতেই গুরত্বপূর্ণ সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করেও প্রসংশিত হয়েছেন।
ব্ল্যাক আনোয়ার ১৯৮৯ সালে ‘ব্যথার দান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে, পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ থেকেই বুঝা যায় তিনি শুধু কৌতুক অভিনেতাই নন, তিনি ছিলেন জাত অভিনেতা।
জনপ্রিয় এই অভিনেতা চলচ্চিত্র ছাড়াও অভিনয় করেছেন, বেতার ও টেলিভিশন নাটকেও। টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
চলচ্চিত্রাঙ্গনে তথা অভিনয়সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে, সদালাপী-ভালো মনের মানুষ হিসেবে পরিচিতি ছিল তাঁর। অভিনয় জীবনের বাইরে, সামাজিক জীবনেও তিনি ছিলেন একজন সজ্জন ব্যক্তি। একজন গুণি অভিনয়শিল্পী হিসেবে ব্ল্যাক আনোয়ার, তাঁর ভক্ত দর্শকদের হৃদয়ে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।