English

27 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ ধীর আলী মিয়া’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার ধীর আলী মিয়া’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৮৪ সালে ১৪ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। প্রয়াত এই গুণী সঙ্গীতজ্ঞর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ধীর আলী মিয়া ১৯২০ সালের ১জানুয়ারী, মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানার, বাশঁগাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম ওস্তাদ শের আলী মিয়া (এই উপমহাদেশের প্রথম বাংগালী মুসলমান যন্ত্রশিল্পী ছিলেন)। তাঁর চাচা ওস্তাদ যাদব আলী এবং ওস্তাদ সাদেক আলী এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত যন্ত্রশিল্পী ছিলেন।

তাঁর ছোট ভাই মনসুর আলী ও চাচাতো ভাই আলাউদ্দীন আলী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক ছিলেন । তাঁর দুই ছেলে আবু তাহের (প্রয়াত) ও আলী আকরাম শুভ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক-সুরকার ।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে ধীর আলী মিয়া কিছুদিন সোনারং উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগবশত পড়ালেখায় ইস্তফা দিয়ে, তাঁর চাচা প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ সাদেক আলীর কাছে বাদ্যযন্ত্রে তালিম নেয়া শুরু করেন। সুদীর্ঘদিন সংগীত সাধনা করে বাঁশী ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শীতা অর্জন করেন তিনি।

১৯৪৮ সালে তদানীন্তন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন ধীর আলী মিয়া। সেসময়ে সুরকার ও অর্কেস্ট্রা পরিচালক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। লাহোরে অনুষ্ঠিত ‘অল পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স’ ভারতে অনুষ্ঠিত বংগ সংস্কৃতি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বুলবুল ললিতকলা এবং আর্টস কাউন্সিলের প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলার লোকসঙ্গীতে আধুনিক ধারার প্রবর্তকও বটে।

ধীর আলী মিয়া ‘ঢাকা অর্কেস্ট্রা’ নামে একটি অর্কেস্ট্রা দল গঠন করে বাংলা সঙ্গীতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
তিনি বাঁশি ছাড়াও, বেহালা, গিটার এবং ক্লারিওনেট বাদনেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তবে বংশীবাদক হিসেবেই তাঁর খ্যাতি সর্বাধিক।

হিজ মাস্টার্স ভয়েজ এবং ঢাকা গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ধীর আলী মিয়ার সুর ও সঙ্গীতপরিচালনায় অনেক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। সেসবের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গীত প্রতিভার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে, তিনি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে তিনি রাশিয়া এবং আফগানিস্তান সফর করেন।

ধীর আলী মিয়া চলচ্চিত্রের গানের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ তিনি সঙ্গীতজ্ঞ সমর দাসের সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
পরবর্তীতে- নাচঘর, উজালা, জোয়ার এলো, কাঞ্চনমালা, রহিম বাদশা ও রূপবান, দস্যুরানী, চম্পাকলি, শ্রীমতি ৪২০, কাঞ্চনমালা, রাজমুকুট, কাজলরেখা প্রভৃতি চলচ্চিত্রে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন তিনি।

ধীর আলী মিয়ার সুর করা কালোত্তীর্ণ কয়েকটি গান- ফুল ছিঁড়ো না, নিয়ো সুরভি…, কলশি কাঁখে ঘাটে যায় কোন্ রূপসী…, বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে কোন্ বঁধুয়া চলে যায়…,
খোকন সোনা রাগ করে না…, আমি বন্ধু প্রেমে হইলাম পাগল.., ঢাকা শহর দেখতে এসে ঘুরছি গোলকধাঁধায়…, পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমার এ দেশ ভাইরে…, পাখি আমায় বলে না তো কোথায় ঠিকানা…, এই না দেশে জন্ম নিলা…, আমি যে তোমায় ওগো আপন ভেবে…, প্রভৃতি।

তিনি রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের উপপ্রধান সংগীত প্রযোজক হিসেবে অবসরগ্রহন করেন ১৯৮৩ সালে ।

সংগীতে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৬৫ সালে, তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তমঘায়ে ইমতিয়াজ’ খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন ধীর আলী মিয়া।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত পরিবারের সদস্য, প্রখ্যাত সুরকার-সঙ্গীতপরিচালক ধীর আলী মিয়া। সঙ্গীতজগতে নিজেও ছিলেন স্বনামখ্যাত জনপ্রিয় সুরকার-সঙ্গীতপরিচালক। আধুনিক বাংলা গানে লোকসঙ্গীতের সুর সংযোজন করে তিনি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।

বাংলাদেশের সঙ্গীতে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের রয়েছে অনন্য অবদান। তিনি নিজেও তাঁর কর্মের মাধ্যমে, বাংলাদেশের সঙ্গীতকে করেছেন সমৃদ্ধ। কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ ধীর আলী মিয়া বাংলাদেশের সঙ্গীত ইতিহাসে চির অম্লান- চির স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন