আজাদ আবুল কাশেম: দেশীয় চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক তথা বিনোদনের ধারাকে সমৃদ্ধকারী নির্মাতাদের অন্যতম একজন তিনি। তাঁর নির্মিত প্রায় সব চলচ্চিত্রই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসাসফল এবং সিনেমাদর্শক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে।
এমন এক সময় গেছে যাঁর নামেই সিনেমা হলে ছবি চলতো । তিনি সামাজিক এ্যাকশান ছবির সুপারহিট পরিচালক মমতাজ আলী।
এই খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ১৯৯৭ সালের ৮ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। প্রয়াত এই গুণি চিত্রপরিচালকের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মমতাজ আলী ১৯৩৭ সালের ১৬ জানুয়ারি, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বালক বয়সেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে, বোম্বে চলে যান। জানা যায় তিনি, বোম্বের বিভিন্ন ফিল্ম ইউনিটে কাজ করার পাশাপাশি সেখানকার চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ১০/১২ টি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি ‘রাজ কাপুর’-এর সাথে কাজ করেছেন বলেও জনশ্রুতি আছে।
মমতাজ আলী ১৯৫৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় এসে প্রথম, এ জে কারদারের ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এছাড়াও লাহোরে ও ঢাকায় আরো অনেক পরিচালেকর সাথেই কাজ করেছেন তিনি। ‘আকাশ আর মাটি’সহ কয়েকটি ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন ।
মমতাজ আলী পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নতুন নামে ডাকো’ মুক্তিপায় ১৯৬৯ সালে । তাঁর পরিচালিত অন্যান্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে- নতুন ফুলের গন্ধ, রক্তাক্ত বাংলা, সোনার খেলনা, কে আসল কে নকল, ঈমান, কুদরত, নালিশ, নসীব, উসিলা, নিয়ত, কারণ, বিশাল, নতিজা, সোহরাব রুস্তম ।
দেশীয় চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক তথা বিনোদনের ধারাকে সমৃদ্ধকারী নির্মাতাদের অন্যতম একজন, দেশবরেণ্য ও জননন্দিত পরিচালক, প্রযোজক-পরিবেশক প্রয়াত মমতাজ আলী। তাঁর নির্মিত প্রায় সব চলচ্চিত্রই যেমন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসাসফল তেমনই সিনেমাদর্শক কর্তৃক সমাদৃত ও প্রসংশিত হয়েছে।
মমতাজ আলী এমন একজন পরিচালক ছিলেন, যার নামেই সিনেমা হলে ছবি চলতো । তাঁর ছবি মানেই ছিল সুপারস্টার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে বিশাল আয়োজনের সমারোহ। তিনি ছিলেন সামাজিক এ্যাকশান ছবির সুপারহিট পরিচালক। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রের গানগুলোও হতো শ্রুতিমধুর, ভালো লাগার আবেশে ভরপুর, হতো জনপ্রিয় ও দর্শক সমাদৃত। তাঁর ছবিতে দর্শকরা পেত পূর্নাঙ্গ সুস্থ্যবিনোদন ছবির স্বাদ।
তোমাকে চাই আমি আরো কাছে, তোমাকে বলার আরো কথা আছে…, অমন করে যেও নাগো তুমি, বুকে আগুন জ্বালিও না তুমি…, ও দাদা ভাই মূর্তি বানাও…, কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো সে কথা তুমি যদি জানতে…,
খোদার ঘরে নালিশ করতে দিলো না আমারে, পাপ-পূণ্যের হিসাব এখন মানুষে করে…,-এমন আরো অনেক কালজয়ী জনপ্রিয় গান থাকতো মমতাজ আলী পরিচালিত ছবিতে।
মমতাজ আলী শারীরিকভাবে চলে গেছেন কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কর্ম ও জীবন। তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প। চলচ্চিত্র মাধ্যমের কর্মীরা যতবেশী মমতাজ আলীর মতো নির্মাতা এবং মানুষকে অনুসরণ করবেন, তাঁর কর্ম নিয়ে করবেন চর্চা, ততবেশী সমৃদ্ধ হবে আমাদের চলচ্চিত্রমাধ্যম।