এ কে আজাদ: দারাশিকো। অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক-পরিবেশক। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে খলচরিত্রসহ নানা ধরণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই গুণি অভিনেতা। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেছেন ব্যবসাসফল সব নামকরা সিনেমায়।
একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে দক্ষতা দেখিয়েছেন সব ছবিতেই। একজন গুণি অভিনেতা হিসেবে দর্শকমহলে প্রসংশিত হয়েছেন, জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন।
দারাশিকো অভিনেতার পাশাপাশি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও ছিলেন খ্যাতিমান।
তাঁর প্রযোজিত ও পরিচালিত প্রায় সব চলচ্চিত্রই সুধীমহলে প্রসংশিত হয়েছে ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এই খ্যাতিমান অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। প্রয়াত এই গুণী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
দারাশিকো (লুৎফে আজম) ১৯৩৯ সালের ৯ জানুয়ারি, পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। এফডিসি’র সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম তাঁর ভাই। আরেক ভাই বদরুল আজম ছিলেন অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক। তাঁর ছেলে সুস্ময়ও চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন।
মঞ্চনাটক থেকে চলচ্চিত্রে আসেন দারাশিকো। তিনি প্রথম ‘লাইলী মজনু’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, কিন্তু মুক্তি পায়নি । তাঁর পরিচালিত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘রাঙা বউ’ মুক্তিপায় ১৯৭২ সালে । প্রযোজিত ও পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্রসমূহ- ফকির মজনু শাহ, আপন ভাই, মাটির পুতুল, অন্ধ বধূ, প্রেম কাহিনী, বোনের মত বোন, ডাকু ও দরবেশ, জিপসি সর্দার, ভাই বন্ধু, স্বর্পরাণী, মশাল, কালাখুন, বাদশা ভাই, অঞ্জলী, আজকের বাদশা, অন্যতম।
চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনার পাশাপাশি একজন ভালো অভিনেতা হিসেবেও ছিলেন খ্যাতিমান। দারাশিকো অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল- পান্ছি বাওড়া, ঝড়ের পাখি, জীবন তৃষ্ণা, পায়ে চলার পথ, সংগ্রাম, হাসি কান্না, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, ডাক পিওন, অপরাধ, উপহার, চলো ঘর বাঁধি, ভুল যখন ভাঙ্গলো, কি যে করি, সূর্যগ্রহণ, জ্বালা, বাদি থেকে বেগম, জানোয়ার, রং বেরং, কুয়াশা, দম মারো দম, অপবাদ, জালিয়াত, দোস্ত দুশমন, বাজিমাত, আঁধার পেরিয়ে, ফরিয়াদ, ফান্দে পড়িয়া বগা, কি যে করি, ফেরারী, সারেং বউ, এখনই সময়, সাক্ষী, খোকন সোনা, বোনের মত বোন, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, বানজারান, চন্দ্রনাথ, নসীব, উসিলা, আঁখি মিলন, রসের বাইদানী, মালাবদল, অগ্নিপুরুষ, রাজিয়া সুলতানা, নসীব, মীমাংসা, জিপসি সর্দার, সম্রাট, প্রেম কাহিনী, সারেন্ডার, মশাল, বিজয়, অবুঝ হৃদয়, কালাখুন, শেষ উপহার, ভয়ংকর সাতদিন, গোলাগুলি, অঞ্জলী, আম্মাজান, প্রভৃতি।
তিনি ‘সংগ্রাম’ (১৯৭৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
যাদের কর্মপ্রতিভায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, তাদের মধ্যে তিনিও একজন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে একজন ভালো মানুষ হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। দারাশিকো তাঁর সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।