একদিকে বলিপাড়ার অন্যতম পরিচালক-প্রযোজক আদিত্য চোপড়া। অন্যদিকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানি মুখার্জি। পাঁচ বছরের প্রেম, তারপর ন’বছরের সংসার। আদিত্য এবং রানির প্রেমকাহিনি সিনেমার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। রানির সঙ্গে থাকবেন বলে ঘরও ছেড়েছিলেন আদিত্য।
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির সেটে প্রথম আলাপ হয় আদিত্য ও রানির। নায়িকাকে অবশ্য আগে থেকেই চিনতেন আদিত্য। তবে আদিত্যকে নাকি এড়িয়ে যেতেন রানি।
১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজা কি আয়েগি বারাত’ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করেছিলেন রানি। একই সঙ্গে নজর কেড়েছিলেন আদিত্যেরও। ছবি মুক্তির পর এক রেস্তরাঁয় রানিকে দেখতে পান তিনি। প্রথম ঝলকেই নায়িকাকে দেখে পছন্দ হয় আদিত্যের।
‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির সাফল্যের পর হিন্দি ফিল্মজগতে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আদিত্য। তিনি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান, তখন বলিপাড়ার অধিকাংশ তারকাই দেখা হলে তার সঙ্গে আলাপ জমাতেন। কিন্তু রানির ক্ষেত্রে হল তার বিপরীত।
আদিত্য জানান, দেখার পরেও রানি এড়িয়ে যান তাকে। রানির এমন আচরণ দেখে অবাক হয়ে যান আদিত্য। পরে আদিত্য তার বন্ধু করন জোহরের সঙ্গে দেখা করেন। করন তখন ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন।
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির জন্য করনের কাছে রানির নাম প্রস্তাব করেন আদিত্য। বন্ধুর কথায় রানিকে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেন করন। শেষ পর্যন্ত ছবির সেটে রানির সঙ্গে পরিচয় হয় আদিত্যের।
রেস্তরাঁয় দেখা হওয়ার পরেও রানি যে আদিত্যকে দেখে এড়িয়ে চলে যান সে কথা অভিনেত্রীকে জানান আদিত্য। রানি সব শুনে আদিত্যকে জানান, তাকে নাকি চিনতেই পারেননি নায়িকা। চিনতে পারলে নিশ্চয়ই আদিত্যের সঙ্গে কথা বলতেন বলেও জানান রানি।
ধীরে ধীরে রানি এবং আদিত্যের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। ২০০১ সাল থেকে যশরাজ ব্যানারের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন রানি। একই বছর দীর্ঘকালীন প্রেমিকা পায়েল খান্নাকে বিয়ে করেন আদিত্য।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই একে অপরকে চিনতেন আদিত্য এবং পায়েল। আদিত্যের বাবা যশ চোপড়া এবং মা পামেলা চোপড়া শুরু থেকেই পায়েলকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে আদিত্য এবং পায়েলের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
পায়েল পেশায় ইন্টিরিয়র ডিজাইনার। জানা গেছে, যশরাজ স্টুডিওর সাজসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন পায়েল নিজেই। আদিত্য এবং পায়েলের বন্ধুত্ব থাকলেও তাদের বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ২০০৯ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় দু’জনের।
পায়েলের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছু দিন পরেই বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, রানির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন আদিত্য। খবর পাঁচ কান হওয়া মাত্রই সকলে আদিত্যের বিচ্ছেদের জন্য রানিকে দায়ী করতে শুরু করেন।
রানির সঙ্গে আদিত্যের মেলামেশাও পছন্দ করতেন না যশ এবং পামেলা। তবুও সব কটাক্ষ উপেক্ষা করে পাঁচ বছর সম্পর্কে ছিলেন রানি এবং আদিত্য। রানিকে বিয়ে করার কথা বাড়িতে জানান আদিত্য। তারপরেই শুরু হয় অশান্তি।
জানা গেছে, যশ ও পামেলার মধ্যে কেউই পুত্রবধূ হিসেবে রানিকে মেনে নিতে পারেননি। সে কথা আদিত্যকেও জানান তারা। কিন্তু রানিকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে ভাবতে রাজি ছিলেন না আদিত্য।
পরিবারের অমত থাকায় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান আদিত্য। বলিপাড়া সূত্রের খবর, এক বছর নাকি হোটেলেই কাটিয়েছিলেন আদিত্য। পুত্র বাড়ি ছেড়ে এত দিন বাইরে রয়েছে, মা হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না পামেলা।
আদিত্যকে বাড়ি ফিরে আসার অনুরোধ করেন পামেলা। কিন্তু আদিত্য শর্ত রাখেন, তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনও রকম সিদ্ধান্তে বাবা-মা হস্তক্ষেপ না করলে তবেই তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন। আদিত্যের সেই শর্তে রাজি হয়ে যান যশ এবং পামেলা।
ধীরে ধীরে চোপড়াদের বাড়িতে যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দেন রানি। অভিনেত্রী হিসেবে রানিকে পছন্দ করতেন যশ ও পামেলা। মেলামেশা বাড়লে আদিত্যের জীবনসঙ্গিনী হিসেবেও রানিকে মেনে নেন তারা।
পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৪ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন আদিত্য এবং রানি। ইতালিতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ের এক বছর পর কন্যাসন্তান আদিরার জন্ম দেন রানি।
আদিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রানি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি কোনওভাবেই আদিত্যের ঘর ভাঙিনি। ওর বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার অনেক পরে মেলামেশা শুরু করেছিলাম। এমনকি, সেই সময় ও আমার প্রযোজকও ছিল না।”
চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন পামেলা। ২০১২ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন যশ। এখন যশরাজ প্রযোজনা সংস্থার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আদিত্য।