কাহিনীকার, গীতিকার ও চিত্রনায়ক মিঠুন-এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০১৫ সালের ২৪ মে (২৪ মে রাত ২টার দিকে), ভারতের কোলকাতায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায়, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। প্রয়াত এই অভিনেতার প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
চিত্রনায়ক মিঠুন (শেখ আবুল কাশেম মিঠুন) ১৯৫৮ সালের ১৮ এপ্রিল, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার দরগাঁহপুর গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ আবুল হোসেন ও মা হাফেজা খাতুন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলির আর.কে.বি.কে.এইচ.সি ইনস্টিটিউট হতে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি চলে আসেন খুলনায়। এখানে এসে ভর্তি হন খুলনা সিটি কলেজে, এখান থেকে এইচ.এস.সি পাস করে পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকলীন সময়েই তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতি অঙ্গনে জড়িয়ে পড়েন।
মিঠুন ১৯৭৮ সালে ‘সাপ্তাহিক কালান্তর’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ‘কালান্তর’-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবেও কাজ করেন।তিনি দেখতে ছিলেন বেশ সুদর্শন।
১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বজলুর রহমান পরিচালিত ‘তরুলতা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন মিঠুন। এই ছবির জন্য গানও লিখেন তিনি।
মিঠুন অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ঈদ মোবারক, নরম গরম, মাসুম, প্রমাণ, চ্যালেন্জ, দিদার, শেষ পরিচয়, দস্যুরাণী ফুলন দেবী, নিকাহ, সাক্ষাৎ, কুসুমকলি, চন্দনা ডাকু, স্যারেন্ডার, ভেজা চোখ, বউ শ্বাশুড়ী, ভাগ্যবতী, বেদের মেয়ে জোসনা, প্রেম প্রতিজ্ঞা, চাকর, জিদ, ত্যাগ, গৃহলক্ষ্মী, বিরাজ বৌ, স্বর্গ নরক, কসম, নিঃস্বার্থ, খোঁজ-খবর, হুশিয়ার, চাঁদের হাসি, শাস্তির বদলে শাস্তি, জীবনসঙ্গী, মহান বন্ধু, ছোবল, সবার উপরে মা, জেলহাজত, ত্যাজ্যপুত্র, শাস্তির বদলে শাস্তি, মুন্না মাস্তান, বাঘিনী কন্যা, এ জীবন তোমার আমার, বাবা কেন চাকর, ম্যাডাম ফুলি, ইত্যাদি ।
নায়ক মিঠুন যেসব চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঈদ মোবারক, জিপসী সর্দার, প্রেম প্রতিজ্ঞা, কুসুমকলি, মাসুম, অন্ধবধূ, শেষ পরিচয়, দুস্য ফুলন, জেল হাজত, ত্যাজ্যপুত্র, প্রভৃতি।
২০০০ সালের পর মিঠুন অভিনয় থেকে দূরে সড়ে আসেন। তবে তিনি স্ক্রিপ্ট রাইটার ও গীতিকার হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। ‘দীগন্ত’ টেলিভিশনে শিশুদের নিয়ে তিনি অনুষ্ঠান করতেন, এই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ।
শেখ আবুল কাশেম মিঠুন আজীবন শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ‘বাংলাদেশ সংস্কৃতিক কেন্দ্র’র তিনি ছিলেন উপ-পরিচালক। এই সংগঠনের সভাপতি, কবি মতিউর রহমান মল্লিক-এর মৃত্যুর পর, মিঠুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেন।
চিত্রনায়ক মিঠুন ব্যক্তিজীবনে, পারভিন আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সঙ্গীতা ও তরী নামে তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন চিত্রনায়ক মিঠুন। অভিনয় করা, চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখা, গান ও গল্প-কবিতা লিখা সমান তালে চালিয়ে গেছেন তিনি। অনেক ভালো ভালো ছবির কাহিনী লিখেছেন। তাঁর কাহিনীতে নির্মিত হয়েছে অনেক ব্যবসাসফল ছবি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মাত্র দুয়েকটি ছবিতে একক নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন মিঠুন। তবে দ্বিতীয় বা সহনায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়। এক সময় দ্বিতীয় বা সহনায়ক হিসেবে, পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। এসব চরিত্রে খুব ভালো অভিনয় করতেন, জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন।
লেখক-চিত্রনায়ক মিঠুন শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও, তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে তিনি বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ ধরে।