নাসিম রুমি: দেশজুড়ে তার পরিচিতি অভিনেতা হিসেবে। কিন্তু এই একটি পরিচয়ে সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি। নির্মাণ করেছেন, চিত্রনাট্য লিখেছেন, সাহিত্য অঙ্গনেও রেখেছেন হাতের ছাপ। বহু গুণের অধিকারী সেই কিংবদন্তির নাম এটিএম শামসুজ্জামান। আজ রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) তার জন্মদিন।
দু’বছর আগেই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। মৃত্যুর পর এটি তার দ্বিতীয় জন্মদিন। মানুষটা নেই, সুতরাং তার জন্মদিনে ঘটা আয়োজনও নেই। কিন্তু না থেকেও গভীরভাবে যারা থাকেন, তাদেরই একজন এটিএম শামসুজ্জামান। তাই পরিবারের পাশাপাশি ভক্ত-সহকর্মীদের স্মরণে ঠিকই রয়েছেন তিনি।
নন্দিত এই অভিনয়শিল্পীর পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। ইচ্ছে ছিল লেখক হবেন। কিন্তু লিখতে গিয়ে ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। আর এই ভুবনই তাকে দিয়েছে খ্যাতি, জনপ্রিয়তা। প্রায় ছয় দশক মিশে ছিলেন শোবিজে। অভিনয়ের মাধ্যমে কখনও দর্শককে হাসিয়েছেন, কখনও আপ্লুত করেছেন, কখনও আবার ভয় ধরিয়েছেন ভিলেন হয়ে। সব চরিত্রেই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
এর বাইরে শতাধিক সিনেমার কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। লিখেছেন নিজের আত্মজীবনীও। যেটার নাম ‘শিল্প সংস্কৃতি ও আমার শিল্পী জীবন’।
এটিএম শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন জগন্নাথ কলেজে। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে রূপালি জগতে কাজ শুরু করেন তিনি। অভিনয়ের শুরুটা হয় ‘নয়া জিন্দেগানি’ নামের একটি ছবির মাধ্যমে। তবে সেটি মুক্তি পায়নি।
এটিএমকে প্রথম পর্দায় দেখা যায় ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায়। এক খবরের কাগজ বিক্রেতার ভূমিকায় হাজির হন তিনি। সেই ছোট্ট চরিত্র থেকে নাটক-সিনেমার অন্যতম দাপুটে অভিনেতায় প্রতিষ্ঠিত হন গুণী এই শিল্পী।
এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘গেরিলা’, ‘চোরাবালি’ ইত্যাদি।
টিভি নাটকেও অনন্য এটিএম। বহু ধারাবাহিক ও একক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে কালজয়ী কয়েকটি নাটক হলো- ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘর কুটুম’, ‘নোয়াশাল’, ‘শীল বাড়ি’ ইত্যাদি।
শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এটিএম শামসুজ্জামান। এছাড়া বর্ণাঢ্য সিনে জীবনে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। একই আয়োজনে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও।