এ কে আজাদ: মায়া হাজারিকা। অভিনেত্রী। একজন প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। সিনেমা পর্দায় মায়া হাজারিকা ছিলেন খলচরিত্রের- রাণী। শুধু খলচরিত্রেই নয়, চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেও যে কোনো চরিত্রে অভিনয় করার দক্ষতা ছিল তাঁর । সহজ-সরল ‘আদর্শবান ভাবী’, ‘মমতাময়ী মা’ এসব চরিত্রেও তিনি অনবদ্য অভিনয় করে গেছেন, সহজ ও সাবলিলভাবে। বহুমুখী অভিনয় প্রতিভায় ভাস্বর, একজন উঁচুমানের গুণি অভিনেত্রী মায়া হাজারিকা’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মায়া হাজারিকা ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহন করেন।
চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান-এর ‘সংগম’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন মায়া হাজারিকা। ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৬৪ সালে। তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে- সাতরঙ, ক্যায়সে কহু, গুনাই বিবি, মিলন, নয়ন তারা, এইতো জীবন, যে আগুনে পুড়ি, বিনিময়, অমর প্রেম, অন্তরালে, সীমানা পেরিয়ে, অনুভব, মতিমহল, জীবন সাথী, সূর্যগ্রহণ, মনিহার, সূর্যকন্যা, সাধু শয়তান, এপার ওপার, চোখের জলে, ভুল যখন ভাঙ্গলো, অন্তরালে, যাহা বলিব সত্য বলিব, প্রিয়তমা, মধু মিলন, কন্যাবদল, টাকার খেলা, বাসর ঘর, বাদী থেকে বেগম, রূপালী সৈকতে, অনুরাগ, আরাধনা, বাদল, মাটির ঘর, মধুমতি, স্বামী, বৌরাণী, মন যারে চায়, নবাবজাদী, মধুমিতা, ছোট মা, ভালো মানুষ, অংশীদার, মৌচোর, সুখের সংসার, মাসুম, ভাংগা গড়া, ইশারা, রসের বাইদানী, মনাপাগলা, প্রেমিক, আশা নিরাশা, লড়াকু, অশান্তি, সোনার সংসার, বীর পুরুষ, দাঙ্গাফ্যাসাদ, দোলনা, অবদান, চাকর, বিসর্জন, সমর, কমান্ডার, রাক্ষস, প্রভৃতি।
মায়া হাজারিকা নায়িকা হবার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন। শুরুর দিকে সহ-নায়িকা হিসেবে কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। শত চেষ্টা করেও তিনি একক নায়িকা হতে পারেননি। সেই সময়কার চিত্রপরিচালকরা তাঁকে খলনায়িকার চরিত্রেই বেশী পছন্দ করতেন। যে কারণে তিনি বাধ্য হয়ে খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও, পরবর্তীতে খলনায়িকা হয়ে, তাঁর অভিনয় প্রতিভার গুণে তিনি সিনেমাদর্শকদের মন জয় করতে পেরেছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে মায়া হাজারিকা ১৯৬৮ সালে, তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুইজন পুত্রসন্তান ছিল, জাবেদ ও জমশেদ। তাঁরা ২০১২ সালে অসাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
মায়া হাজারিকা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন প্রতিভাময়ী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। সিনেমা পর্দায় মায়া হাজারিকা ছিলেন খলচরিত্রের- রাণী। অভিজাত পরিবারের শ্বাশুড়ি/ অহংকারী মা বা ষড়যন্ত্রকারী বড় বোন/ভাবী, কোনো পতিতালয়ের কূটচরিত্রের সর্দারণী- চরিত্রের প্রয়োজনে যে কোনো ভূমিকায় তাঁকে যেমন মানিয়ে যেত, তেমনই তাঁর অভিনয় প্রতিভায়, চরিত্রকে বাস্তবিকভাবে ফুঁটিয়ে তোলার অসাভাবিক ক্ষমতা ছিল তাঁর।
শুধু খলচরিত্রেই নয়, চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে যে কোনো চরিত্রে অভিনয় করার দক্ষতা ছিল । সহজ-সরল আদর্শবান ভাবী, মমতাময়ী মা, সন্তানের জন্য আঁকুতি- বাংলার স্নেহময়ী এমন সব মা, ভাবীর চরিত্রেও তিনি অনবদ্য অভিনয় করে গেছেন, সহজ ও সাবলিলভাবে। তিনি ছিলেন বহুমুখী অভিনয় প্রতিভায় ভাস্বর, একজন উঁচুমানের গুণি অভিনেত্রী।
একজন সফল অভিনেত্রী মায়া হাজারিকা, যিনি তাঁর অভিনয় কারিশমার মায়াডোরে বেঁধেছিলেন লাখো কোটি সিনেমাদর্শককে। তাই আজও- লাখো কোটি সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের, মায়াডোরে বাঁধা আছেন- মায়া হাজারিকা।