ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ীতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণের কাজ চলছিল। হঠাৎ সেখানে হট্টগোল শুরু হয়। এক পর্যায় অনুষ্ঠান স্থগিত করা হলেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আবারও অনুষ্ঠান শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দেশের একটি গণমাধ্যমে কথা বলেন ‘ইত্যাদি’র পরিকল্পক, নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত।
তিনি বলেন, সাধারণত কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বা দেশের কোনো ঐতিহ্যবাহী স্থানে আমরা অনুষ্ঠানটা করি। আমরা জানতে পারলাম, ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈল উপজেলায় টংকনাথের রাজবাড়ি নামে একটি জমিদারবাড়ি আছে, যেটা খুবই বিখ্যাত, প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনও। আমাদের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটা সংরক্ষণও করেছে। এরপর আমরা ওখানকার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললাম।
যেহেতু এটা গ্রামীণ এলাকা, তাই সেখানে এত লোক পাব কি না। তা নিয়ে সংশয় ছিল। তারপরও তাদের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু মিলে টংকনাথ রাজবাড়িতে আমরা করলাম। অনুষ্ঠানের আগে আমরা আট হাজার প্রবেশ পাস দিয়েছি। ওখানে কিন্তু আর্মি, পুলিশ সবাই ছিল। কিন্তু যখনই আমরা অনুষ্ঠান শুরু করলাম এবং আমি মঞ্চে উঠলাম, শুনলাম, চারদিক থেকে তিন কিলোমিটারের মতো রাস্তা প্যাকড। পাঁচ লাখের অধিক লোক। এত মানুষকে আমি কোথায় বসতে দেব। তখন বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়ল তারা। ওখানে নারী আছেন, শিশু আছে, আছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এরপর শুরু হয়ে গেল বিশৃঙ্খলা। পুলিশ এবং আমরা মিলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছি। অস্থির অবস্থা। অনেকেই চেয়ার–ছোড়াছুড়ি করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি তখন প্রশাসনকে ডেকে বললাম, এভাবে অনুষ্ঠান করা যাবে না। মানুষ শান্ত হোক, তারপর অনুষ্ঠান শুরু করব। আপাতত আমরা অনুষ্ঠান কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখি। এরপর অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ করে জানিয়ে দিলাম, ‘অনুষ্ঠান আপাতত হচ্ছে না। আপনারা শান্ত হন।’ সঙ্গে সবাইকে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানালাম। পরবর্তী সময় আমরা চিন্তা করব কী করা যায়।
হানিফ সংকেত বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু করি আমরা। সাড়ে ৭টা কি ৮টার সময় ঘটনার সূত্রপাত। মঞ্চে ওঠার পর যখন কথা বললাম, তখনই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরপর একটা নাচ করলাম। তারপর রবি চৌধুরী ও লিজার গানের অর্ধেকটা করলাম, তখন সেকেন্ড বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ রেখে রাত সাড়ে ৯টা কি ১০টার দিকে আবার শুরু করেছি। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শুটিং করেছি। এখানকার স্থানীয় লোকজন খুবই আন্তরিক। তারা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। লজ্জিত হয়েছেন। আমরাও বুঝিনি যে এত লোক হবে। কর্তৃপক্ষও বোঝেনি যে এত লোক হবে। আমাদের জায়গাটা আসলে আরও বড় হওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, এমন ঘটনা আমার জীবনে নতুন নয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ঘটেছে, ওখানেও কয়েক লাখ লোক হয়েছিল। এরপর তো ছাদ ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। তেঁতুলিয়ায়ও যখন শুটিং করেছি, তখন ছাদ ভেঙে পড়ে গিয়েছিল। তবে আমরা এত কিছুর মধ্যে অনুষ্ঠান একেবারের জন্যও বন্ধ করিনি। তবে এবার যে এক থেকে দেড় ঘণ্টা স্থগিত করেছি, এ রকম হয়নি।
এখানে নারী দর্শক-শিশুদের তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছিলাম। সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেছি, তারা শুনেছেনও। এত লোক, ভয়ে কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করেছিল। আমরা তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান বন্ধ করে অনেক দর্শককে স্টেজের পেছনে নিয়ে আসি। দর্শকের কোনো অপরাধ আমি বলব না। এখন কেউ যদি আমাকে ভালেবাসে, তা তো অন্যায় নয়। সেই ভালোবাসা থেকে তারা এসেছে। যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে থেমে গেছে। আমরাও চমৎকারভাবে অনুষ্ঠান করেছি।