নাসিম রুমি: কাজী হায়াৎ জানান, “আমার অনেক দিনের লালিত গল্প এটি। নিজের চোখে দেখা একটি সত্য ঘটনা নিয়েই এ ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম।
মফস্বলের ঘটনা এটি। ছোট্ট ছেলেটি তার মায়ের হাত ধরে ৪ ঘণ্টা বসেছিল। তখন মা এবং ছেলের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিল না। প্রশ্নটি ছিল-মা ছেলেকে কী বলবে আর ছেলে মাকে কী জিজ্ঞাসা করবে।
এ দৃশ্য দেখার পরই সেখান থেকে আমার গল্পের উৎপত্তি এবং চলচ্চিত্র ‘আম্মাজান’। ”
আমার অনেক দিনের লালিত গল্প এটি। নিজের চোখে দেখা একটি সত্য ঘটনা নিয়েই এ ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম। মফস্বলের এ ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটেছিল, তারপর সেই ছোট্ট ছেলেটি তার মায়ের হাত ধরে ৪ ঘণ্টা বসেছিল। তখন মা এবং ছেলের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিল না
যেভাবে শাবানার পরিবর্তে শবনম
‘আম্মাজান’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অভিনেত্রী শাবানার কাছে যাই, উনাকে গল্প শোনাই, তিনি মনোযোগ দিয়ে পুরো গল্পটি শোনেন এবং শেষ দৃশ্য শুনে কাঁদছিলেন।
তারপর কান্না থামিয়ে বললেন, আগামীকাল এসে শিডিউল নিয়ে যাবেন। উনার কথা মতো পরদিন ২ লাখ টাকা সাইনিং মানি নিয়ে তাঁর কাছে গেলাম। তিনি এফডিসির ৮ নম্বর ফ্লোরের মেকআপ রুমে ছিলেন। আমি উনাকে সালাম দিলাম। উনি আমাকে না দেখার ভান করে শুটিংয়ে চলে গেলেন। সেটে গিয়ে উনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বিব্রতবোধ করলেন এবং আমাকে কীভাবে না করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘হায়াৎ সাহেব আমি ছবিটি করতে পারব না। আমার কাছের মানুষরা নিষেধ করেছেন। ’ এ কথা বলেই দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি অবাক এবং হতাশ হলাম। এসব ঘটনা জানতেন তৎকালীন প্রখ্যাত সিনিয়র চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী। তিনি আমাকে একটি পরামর্শ দিয়ে প্রখ্যাত অভিনেত্রী শবনমের কাছে পাঠালেন। তিনি আবার টেলিফোনে শবনমকে বলে দিলেন ‘আপনি ছবিটা করবেন’। শবনম গল্প শুনে একবাক্যে বলে দিলেন, ‘আপনি যেদিন চান সেদিন থেকে আমি কাজ করব। আপনার ছবির জন্য আমার শিডিউল ওপেন থাকল। ’ ব্যস এভাবেই শাবানার জায়গায় শবনম স্থলাভিষিক্ত হলেন।
কোনো প্রযোজক রাজি হলেন না
একদিন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক শফী বিক্রমপুরী একটি ছবি পরিচালনা করতে তার প্রযোজনা সংস্থার অফিস যমুনা ফিল্মসে আমাকে ডাকলেন। তারা দুই ভাই আমাকে নিয়ে লাঞ্চের পর অফিস রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে নিবিষ্ট মনে গল্পটি শুনলেন। শোনার পর বললেন, না, এই গল্পে আমরা ছবি নির্মাণ করব না এবং অন্য কাউকেও এ গল্পটি দিয়ে ছবি বানিয়ে দেবেন না। তাঁরা বললেন, আমাদের দেশে মা ধর্ষিত হয়েছে এবং তা ছেলে দেখে ফেলেছে এমন গল্পের ছবি চলতে পারে না। তাঁদের কথায় আমি খুবই হতাশ হলাম। কিন্তু আমার মনে জিদ চেপে বসল। প্রতিজ্ঞা করলাম গল্পটি দিয়ে ছবি বানাবোই। এরপর আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক শিকদার সাহেব আমাকে ছবি নির্মাণের জন্য ডাকলেন এবং যথারীতি গল্পটি শোনার পর তিনিও ‘না’ সূচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। তিনিও দৃঢ়ভাবে আমাকে জানিয়ে দিলেন এমন গল্পের ছবি এদেশে চলবে না।
এরপর আশার আলো জ্বলল…
যখন গল্পটি নিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়ে হতাশার অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম তখনই একদিন প্রযোজক অভিনেতা ডিপজল একটি ছবি নির্মাণের জন্য আমাকে ডাকলেন। মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁকে গল্পটি শোনালাম। তিনি পছন্দ করলেন এবং বললেন, দ্রুত ছবিটি নির্মাণ করুন। আমি আমার প্রিয় গল্পটি নিয়ে অবশেষে আশার আলো দেখলাম।
মান্নাকে নিতে না করলেন ডিপজল
আমি গল্পের বাদশাহ মানে নায়ক চরিত্রে মান্নাকে নেওয়ার কথা বললে ডিপজল তা নাকচ করে দিয়ে বললেন, তাঁকে ছাড়া রুবেল বা অন্য যে কাউকে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করুন। কারণ মান্না ও ডিপজলের বন্ধুত্বের সম্পর্কে তখন চিড় ধরেছিল। মান্নাকে না নেওয়ার কথা বলায় আমি আবার হতাশায় ডুবলাম। কারণ আমি জানি এ চরিত্রটি রূপায়ন মান্না ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব বা মানানসই নয়। ঘটনাটি শুনে একদিন মান্না আমাকে বললেন, আপনি নাকি রুবেলকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন? আমি বললাম ‘হ্যাঁ’, এ নায়কের চরিত্রটি খুবই মারাত্মক। তুমি যদি পার ডিপজলের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ঠিক করে নাও। নাহলে তোমার হাত থেকে একটি ভালো ছবি চলে যাবে। তারপর সে ডিপজল সাথে যোগাযোগ করে ঝগড়া মিটিয়ে আম্মাজান ছবিতে চুক্তিবদ্ব হয়।